আম খান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।



আম

  "ইদানিং বাংলাদেশের রংপুর জেলায় কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত " হাঁড়িভাঙা " জাত ও নামে একটি আম ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে । এ আম বিদেশেও রপ্তানি হয়।"

  প্রিয় পাঠক ও ব্লগার , সবাইকে শুভেচ্ছা, আজকে উপস্থাপন করছি,  বিশ্বে সবার কাছে পরিচিত ,সকল ধর্মের মানুষের কাছে ও সকল বয়সীদের  কাছে  সমাদৃত ফলের রাজা আম সম্পর্কে ।

আম

     আম গাছ এশিয়া সহ বিশ্বের সকল মহাদেশের সর্বত্রই কমবেশি দেখা যায়। এটি একটি মৌসুমী রসালো ফল। আম গাছ একটি বহু বর্ষজিবি উদ্ভিদ এবং গাছের ইতিহাসও অনেক সুপ্রাচীন।

    ভারতের মালদহ্, পশ্চিম বঙ্গ ও আসাম রাজ্যে, বাংলাদেশর রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ও মায়ানমারে বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়ংশ আম জন্মেে। আম এনাকার্ডিয়াসিএসি গোত্রের ম্যাঙ্গিফেরা প্রজাতির এ গাছ।

     আম গাছ বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র গাছ হিসেবে পরিচিত ।কথিত আছে মহামুনি সিদ্ধার্থ বা গৌতম বুদ্ধ   তার ভক্তদের নিয়া, কোন এক আম বাগানে বিশ্রাম কালে স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন হয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন । তখন থেকে আম গাছ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে পূজনীয় হয়ে ওঠে ।

      প্রাচীন কাল থেকে হিন্দু ধর্মের অনেক পুজোয় আম গাছের পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে।

      এশিয়া মহাদেশের ভারত ও বাংলাদেশে আমের অনেক জাত ও নাম রয়েছে। উল্লেখ্য যে ফলের রাজা আম হইলেও আমের রাজা কিন্তু ফজলি আম।   এছাড়াও উল্লেখযোগ্য আমের জাত ও নাম হচ্ছে আম্রপালি , ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, গোপালভোগ, লেংড়া, লতাবোম্বাই, কিষানভোগ, আশ্বিনা,কাঁচমোয়া, কাঁচামিঠা, বারোমাসি, মিস্রিভোগ,মোহনভোগ ওলক্ষনভোগ ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও, আকার,আকৃতি, স্বাদ ও গন্ধ ভেদে নানান এলাকায় হাজারও রকম বাহারি জাত ও নামে পরিচিত এই আম ফলটি । 

আম কাঁচা ও পাকা, উভয় অবস্থায় খাওয়া হয়ে থাকে । এছাড়াও, আমের জ্যাম, জেলি, সরবত, জুস, চাটনি, হরেক রকম আঁচার, কচি আমের তরকারি, সুক্তো, আমসি, আমসত্ত্ব, ওষুধ তৈরির কাজে এবং ডালের সহিত মিশিয়ে রান্না করার জন্য খুবই প্রসিদ্ধ। বর্তমানে সকল প্রকার ওষুধ তৈরির কারখানা ও বেভারেজ কোম্পানিতে আমের ব্যাপকভাবে ব্যবহার দেখা যাইতেছে।  

   ইদানিং বাংলাদেশের রংপুর জেলায় কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত " হাঁড়িভাঙা " জাত ও নামে একটি আম ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে । এ আম বিদেশেও রপ্তানি হতে শুরু করেছে এবং বহির্দেশের সুখ্যাতি পাচ্ছে।"                    

     ফলের রাজা আম পুষ্টিমানে প্রায় সকল ফলের উর্ধে।আম শুধু সুস্বাদু ফলই নহে, এতে রয়েছে  ভিটামিন মিনারেল ও জীবন রক্ষাকারী ভেষজ ঔষধী গুন।পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও বি, ম্যাংগানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফাইবার । অন্যান্য উপাদানের সাথে   কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি।   

খাদ্য ও পুষ্টি গবেষকদের গবেষনার ফলাফল থেকে জানা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম  ভক্ষণযোগ্য আমে রয়েছে, ৫০-৮০ কিলক্যালরি খাদ্যশক্তি। যাহা খাদ্যমান বিচারে নিম্নরুপ-

° প্রোটিন--------------------------------০.৮২ গ্রাম

° স্নেহ পদার্থ ---------------------------০.৪০ গ্রাম

° খাদ্য আঁশ-------------------------------১.৬ গ্রাম

° চিনি ---------------------------------------১৪ গ্রাম

° শর্করা-----------------------------------১৫.১ গ্রাম

° থায়ামিন-বি১-----------------------০.০৩৮ মিগ্রা

° রিবোফ্লাভিন-বি ২-----------------০.০৪১ মিগ্রা

° নিয়াসিন-বি৪----------------------০.০৬৭২ মিগ্রা

° প্যান্টোথেনিক এসিড-বি৫--------০.২০০ মিগ্রা

° ভিটামিন-বি৬ ------------------------০.১২২ মিগ্রা

° কোলিন ------------------------------------৭.৮ মিগ্রা

° ভিটামিন-সি -----------------------------৩৬.৭ মিগ্রা

° ভিটামিন-ই ------------------------------০.১০ মিগ্রা

° ভিটামিন-কে--------------------- ৪.৬ মাইক্রোগ্রাম  

° ভিটামিন-এ সমতুল্য----------- -৫৬ মাইক্রোগ্রাম

° বিটা ক্যারোটিন ----------------৬৪৬ মাইক্রোগ্রাম

° লুটিন জিজানথেন---------------২৬ মাইক্রোগ্রাম

° ফলেট-B9-------------------------৪৫ মাইক্রোগ্রাম

° ক্যালসিয়াম---------------------------------১৩ মিগ্রা

° ম্যাগনেসিয়াম ------------------------------১১ মিগ্রা

° পটাসিয়াম---------------------------------১৭১ মিগ্রা

° সোডিয়াম-----------------------------------১.২ মিগ্রা

° ম্যাঙ্গানিজ--------  ---------------------০.৬৬৫ মিগ্র

° ফসফরাস---------- ----------------------১৪.৪ মিগ্রা

° লোহা -------------------------------------০.১৮ মিগ্রা

° দস্তা-----------------------------------*---০.১১ মিগ্রা

° পানি  ------------------------------------৭০-৮৫ %

আমের গঠনশৈলী,কাঁচা, পাকা, স্থান , কাল, পাত্র ভেদে পুষ্টি ও খাদ্যমানের হেরফের হতে পারে। 

★আম ও আম গাছের ব্যাবহার:-       

আম কাঁচা ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। এছাড়াও আমসত্ত্ব, মোরব্বা , চাটনি, জুস, ক্যান্ডি, জেলি , আচার ও  সরবত তৈরি করে খাওয়া হয়। কচি আমের তরকারি ও ডালের স্বাদ বাড়াতে আমের জুড়ি মেলা ভার। আম অতুলনীয় মৌসুমী ফল।
বর্তমান দুনিয়ায় আমের ছাল-বাকল, পাতা-মুকুল সবই ভেষজ হিসেবে এবং সকল ধরনের ওষুধ শিল্পে ব্যাপকভাবে  ব্যবহার হইতেছে।       
     আম গাছের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখা যায়।  শিকড়, কান্ড, ছাল-বাকল, ডাল-পালা ও পাতা সবই জ্বালানি হিসেবে এবং কান্ড সমুহ আসবাব পত্র তৈরিতে ব্যবহার হয়ে আসছে।

♥ আম ফলের উপকারিতা

★যৌন শক্তি বাড়াতে আমের ভুমিকা :-

  আমে রয়েছে সেক্সহরমোন উদ্দীপ্ত
করার মত শক্তিশালী ইনোস্ট্রজেন, স্টিমুলেক্স ও ক্যারোটিন, ভিটামিন- B6, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। এসব সক্রিয় উপাদান নারী ও পুরুষ উভয়ের স্নায়ুবিক দুর্বলতা দুর করে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।                 
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, মৌসুমে কাচা ও পাকা আম গড়ে ১০ - ১৫ দিন খেলে আবার আমের মৌসুম আসা পর্যন্ত আপনি এর সুফল পেতেই থাকবেন। কাঁচা আম রোদে শুকিয়ে পাউডার করে প্রতিদিন দুই চামুচ পরিমাণ সকালে খালি পেটে এক থেকে তিন মাস    খেতে পারলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাধা থাকেনা।  

★ কোলেস্টেরল মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে :-            

     আমে বিদ্যমান, ভিটামিন সি, মিনারেল, পেকটিন, পটাসিয়াম, গ্যাস্ট্রোইন, টেস্টট্রানাল ও ফাইবার , রক্তনালির ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল, টিজি)  সরিয়ে , উপকারি কোলেস্টেরল ( এইচডিএল) এর সরবরাহ বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ।


★ কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দুর করতে:-

 কাঁচা ও পাকা আম ফলে রয়েছে  প্রচুর পরিমানে আঁশ, উপকারী মিনারেল এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার মত সব সক্রিয় উপাদান সমুহ। এসব শক্তিশালি উপাদান সমুহ মানবদেহের ডাইজেস্টিভ প্রকৃয়াগুলোকে সচল রেখে  হজমশক্তি বৃদ্ধি করে  ও ক্ষুধা বাড়ায় সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যকে জানায় গুড বাই।

★ হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক সচল রাখতে  :-

আমফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, হৃদপিণ্ড বান্ধব উপাদান সমুহ, প্রচুর পরিমানে দুস্পাপ্য খনিজ সমুহ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য ভিটামিন সমুহ। এসব উপাদান  মানবদেহের হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের গতি  স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করে থাকে।  

★স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আমের ভুমিকা :-

আমে রয়েছে ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, খনিজ এবং      গ্লুটামিন নামক শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। যাহা মানব মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সরাসরি ভুমিকা রাখে। শিশু-কিশোরদের মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। পঞ্চাশোর্ধ বয়স্ক ও প্রৌঢ় মানুষদের মস্তিষ্ক বিভ্রান্তি সমস্যায়ও সুরক্ষা দিতে পারে আমের এসব উপাদান। 

★ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে  :-  

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আমের ক্ষমতা সত্যিই অপরিসীম। এর ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, বিটা ক্যারোটিন, কোলিন নামের এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ, রক্তনালির সংকোচন সহ অন্যান্য বাঁধা দুর করে, হৃদপিণ্ডে সমানভাবে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে। এতে লো এবং হাই উভয় প্রকার রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। কাঁচা বা পাকা টক আম ও আমের টক আচার খেলে উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে স্বাভাবিক হয়ে আসে।                             
  ★ হাড় ও দাঁত ক্ষয়রোধে:- 

   আমের বিদ্যমান ক্যালসিয়াম,  পটাসিয়াম এবং   এন্টি রিউম্যাটিক উপাাদান সমুহ, বাত ব্যাথা কমাতে ও দাঁতের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে । এসব উপাদান হাড় ও দাত গঠনে এবং এসবের ক্ষয় রোধে খুবই কার্যকরী। 

★ ডায়াবেটিসে আমের ভুমিকা :- 

   পাকা মিষ্টি আমে রয়েছে, প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেড ও গ্লুকোজ। ডায়াবেটিস রোগীকে বেশি  মিষ্টি পাকা আম হিসাব করে খেতে হবে। তানা হলে রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা বেড়ে গিয়ে বিপদজনক অবস্থা হয়ে যেতে পারে। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়েই মিষ্টি পাকা আম খেতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।    ডায়াবেটিস রোগীগন কাঁচা টকযুক্ত আমে পাবেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মত যতেস্ট উপাদান।  কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল, এন্টিঅক্সিজেন্ট এবং ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনকারী উপাদান সমুহ। যাহা প্যাংক্রিয়াসের ক্ষমতা স্বাভাবিক করে এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে, ডায়াবেটিস স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে।
আম যকৃত, কিডনি ও প্যাংক্রিয়াস সুস্থ রাখতে সরাসরি ভুমিকা রাখে ।

★ ক্যান্সার প্রতিরোধে আমের ভুমিকা  :-    

আমে রয়েছে, ক্যারোটিন,  আইসো ক্যারোটিন
স্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, এসিড গ্যালিক ও শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট।  যাহা মানবদেহে ক্যান্সার বিরোধী ভুমিকা পালন করতে পারে। এসব শক্তিশালি উপাদান   স্থন ক্যান্সার , প্রস্টেট ক্যান্সার ও কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সরাসরি ভুমিকা রাখতে খুবই কার্যকরী
 
★ মুখের সুরক্ষায় আমের ভুমিকা :-

 কাঁচা আমে বিদ্যমান ভিটামিন সি , ক্যারোটিন  ও ভিটামিন সমুহ,  মুখের ও জ্বীহ্বার ঘা সারাতে, দাত ও মাড়ি ব্যাথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ।
 
 ★ চোখের যত্নে কাঁচা ও পাকা আম:-

কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এবং  পাকা আমে রয়েছে  প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ এবং ডি। যাহা চোখের সুরক্ষায়  অত্যন্ত  কার্যকরী ও রাতকানা রোগেের মপহৌষধ।

★ ট্রেস কমাতে:-
   
   যাহারা সকাল বেলায়, ঘুম থেকে উঠে শারীরিক অস্বস্তি  বোধ করেন,  তারা নিয়মিত আম খেতে পারেন,  দেখবেন স্বস্তি পাবেন। আম ট্রেস কমাতেও কার্যকরী। 

আম নিয়ে লেখা আজ এখানেই,  আগামিতে আবার আসব  অন্য কোন পোস্ট নিয়ে , সাথেই থাকুন।

   লেখা ও ছবি - ডাঃ এজেএম নজরুল ইসলাম
প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।