কাঁঠাল কেন প্রাকৃতিক মাল্টি ভিটামিন?



কাঁঠাল 

    কাঠাল শুধু মানুষের জন্য উপকারি ফল তা কিন্তু্ু নয়।পৃথিবীর সকল প্রানী, মানুষ, পশু-পাখি, কিটপতঙ্গ সবার স্বাস্থ্য রক্ষা ও পছন্দের ফল। স্বাদ ও উপকার জেনে পাওয়া সাপেক্ষে সবাই এফল খেয়ে থাকে।
কাঁঠালকে প্রাকৃতিক মাল্টি ভিটামিন বলা হয়।  কেননা এতে রয়েছে জীবন রক্ষাকারী প্রায় সকল উপাদান।
স্বাস্থ্যরক্ষায় এতে রয়েছে ১০০তে ১০০ কিলোক্যালরি শক্তি।

   প্রিয় পাঠক ও ব্লগার শুভেচ্ছা রইল।

 সবাই ভাল আছেন এই কামনায় আজকের লেখা শুরু করছি।
 আজকের ভাবনায়, লেখার বিষয় রাখছি, সবার পরিচিত, পছন্দের, নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধে ভরা, সুস্বাদু এবং রসালো একটি ফল "কাঁঠাল" সম্পর্কে।

     কাঁঠাল বিশ্বের  সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত একটি ফল। ছোট ও বড় সবাইকে কাঠাল আগ্রহ ভরে খাইতে দেখা যায় ।

     গৃহস্থ পরিবারে একটি কাঁঠাল পরিবারের সবার একদিনের  খাদ্য যোগান দিতে সক্ষম। গৃহস্থ সবাইকে নিয়ে খাবে রসালো মিস্টি অংশ , গৃহিণী রান্না করবে বিচির তরকারি বা ভর্তা, বাড়ির গরু , ছাগল, ভেড়া , ছাগল, হাস, মুরগী খাবে সমস্থ ফেলনা উচ্ছিষ্ট।

      কাঠাল বিশ্বের সকল মহাদেশে জন্মিলেও, উষ্ণ প্রধান অঞ্চলে বেশি জন্মেে। এশিয়ার সর্বত্রই এ ফল  ব্যাপক ভাবে জন্মে। তবে ভারত ও বাংলাদেশে বেশি চাষ হয় বলে জানা যায়।

 কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল।  ফলের মধ্যে কাঁঠাল সব চেয়ে বড় । গ্রীস্ম কালিন মিস্টি রসালো ও সুস্বাুদু  ফলটি কাঁচা ও পাকা খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালের তরকারি ভারতবর্ষে অত্যন্ত সমাদৃত। তরকারি খাওয়ার উপযোগী কচি কাঁঠাল " এঁচোড় " নামে পরিচিত।

    ভারত বর্ষের খাদ্য পুস্টিবিদ গন বলেন ,  "এঁচোড়"এর তরকারি খাবারে রুচি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।

কাঠালের বিচি সকল আমিষ ও নিরামিষের সঙ্গে মিলাইয়া, তরকারি রান্না করা যায়। এর বিচি ভেজে বা সিদ্ধ করে ভর্তা ও চাটনি খেতে খুবই মুখরোচক এবং শুধু ভাজা খেতেও মজা লাগে।

কাঠাল শুধু মানুষের জন্য উপকারি ফল তা কিন্তু্ু নয়।পৃথিবীর সকল প্রানী, মানুষ, পশু-পাখি, কিটপতঙ্গ সবার স্বাস্থ্য রক্ষা ও পছন্দের ফল। স্বাদ ও উপকার জেনে পাওয়া সাপেক্ষে সবাই এফল খেয়ে থাকে।

কাঁঠালক প্রাকৃতিক মাল্টি ভিটামিন বলা হয় কেননা এতে রয়েছে জীবন রক্ষাকারী প্রায় সকল উপাদান।
স্বাস্থ্যরক্ষায় এতে রয়েছে ১০০তে ১০০ কিলোক্যালরি শক্তি।

খাদ্য ও পুষ্টি গবেষকদের, গবেষনা থেকে জানা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষনযোগ্য পাকা কাঁঠালে রয়েছ,৯৭ কিলোক্যালরি। খাদ্য ও পুষ্টি মান বিচরে যাহা নিম্নরূপ :-

* কার্বোহাইড্রেট ----------------------২৪.৫০ গ্রাম

* সুগার ---------------------------------১৯.০৫ গ্রাম

* প্রোটিন ---------------------------------১.৭৫ গ্রাম

* পটাসিয়াম -----------------------------৪৫০ গ্রাম

* ফ্যাট ------------------------------------০.৬৫ গ্রাম

* আয়রন -----------------------------------২৩ গ্রাম

* ডায়াটারি ফাইবার ------------------১.১০ গ্রাম

* থায়ামিন-বি১ --------------------------১১০ মিগ্রা

* রিবোফ্লাভিন-বি২ ------------------০.০৬০ মিগ্রা

* নিয়াসিন-বি৪ --------------------------০.৩০ মিগ্রা

* প্যানটোথেনিক এসিড-বি---------০.২৪০ মিগ্রা

* ভিটামিন-বি৬ -------------------------০.৩৩০ মিগ্রা

* ভিটামিন-সি ---------------------------১৩.১০ মিগ্রা

* ভিটামিন-ই-------------------------------০.৪০ মিগ্রা

* ক্যালসিয়াম -------------------------------২৫ মিগ্রা

* ম্যাগ্নেসিয়াম- ------------------------------৩০ মিগ্রা

* ম্যাজ্ঞানিজ ----------------------------০.০৪৫ মিগ্রা

* ফসফরাস ---------------------------------২২ মিগ্রা

* সোডিয়াম --------------------------------২.৫ মিগ্রা

* জিংক ---------------------------------- ০.১৫ মিগ্রা

* ফলেট-বি৯ -----------------------২৫ মাইক্রোগ্রাম

* ভিটামিন-এ সমতুল্য --------------৬ মাইক্রোগ্রাম

* বেটা ক্যারোটিন ------------------৬৩ মাইক্রোগ্রাম

* লুটিনজিজানথেন --------------১৬০ মাইক্রোগ্রাম   

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিদদের মতে, কাঠাল নিম্নবর্ণিত সমস্যায় খুবই উপকারি একটি ফল।

  ★ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাঁঠাল -   
        
     পাকস্থলী, ফুসফুস, স্তন ও প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাঁঠালে রয়েছে, এন্টি অক্সিডেন্ট,  বিটাক্যারোটিন,  ক্লাভিনয়েড ও লুটেইন নামক শক্তিশালি এজেন্ট সমুহ। যাহা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করে। প্রস্টেট ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাঁঠালের রয়েছে সক্রিয় ভুমিকা।

 ★ মা ও শিশু সুরক্ষায় কাঁঠাল -

খাদ্য ও পুষ্টি বিদগন বলেন, কাঁঠালে রয়েছে , প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ,  সি, আয়রণ ,  ক্যালসিয়াম, আয়রণ, শর্করা ও পর্যাপ্ত পরিমান খনিজ,  যাহা স্থন্যদাত্রী মাতৃ স্বাস্থ্য, ও বাড়ন্ত শিশুর স্বাস্থ্যের বিকাশে মহৌষধ। গর্ভবতী মায়েদের ও ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পাকা কাঁঠাল খেতে হবে।  কেননা অনেক মহিলার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সমস্যা দেখা যায়। তবে কাঁচা কাঁঠালের তরকারি ও সিদ্ধ খেতে কোন বাধা নাই।

              
  ★  পাতলা পায়খানায় কাঁঠালের বিচি....

 কাঠালের বিচির তরকারি ,  সিদ্ধ, পোড়া বা ভাজা বিচির ভর্তা ও চাটনি সত্যিই এক মজাদার খাবার। পাতলা পায়খানা ও আমাশয়ে , কাঁঠালের বিচি ভেজে  বা সিদ্ধ করে খাইলে দ্রুত আরাম হয় ।  তবে বেশি খেলে বদহজম ও অজীর্ন হতে পারে।

আরও পড়ুন -- লাউ এর উপকারিতা 
         
 ★ চোখের সমস্যায় কাঁঠাল  -

 খাদ্য বিশেষজ্ঞগন বলেন, কাঠালে বিদ্যমান  ভিটামিন এ,  সি ও ডি ,  চোখের পুষ্টি জোগায়, অন্ধত্ব জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে ও রাতকানা রোগ প্রতিহত করে ।             
ত্বকের ও চুলের যত্নে -

 ত্বক ও চুলের যত্নে ভিটামিন এ, সি ও ডি এর ভুমিকা অপরিসীম ,যাহা কাঁঠালে বিদ্যমান । 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঠাল -   
     
     কাঁঠালে বিদ্যমান জিংক , রক্তে ইনসুলিন হরমোনের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে, যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় থাকে ।  পাকা কাঁঠালে রয়েছে  প্রচুর পরিমানে গ্লুকোজ, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে তানাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে ।

হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় -

কাঠালে বিদ্যমান প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরি ভুমিকা রাখে এবং দেহের  কোষ-কলা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

  কাঁঠালে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিজেন্ট ও অন্য এজেন্ট গুলো রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ  নিশ্চিত  করতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করে ।

★ রোগ প্রতিরোধে কাঁঠাল -

        সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম , রক্তের ক্ষার ও অম্লের সমতা বজায় রাখে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও রক্তে জীবাণু প্রবেশে বাধা প্রদান করে । 

সর্দি-কাশি প্রতিরোধে -

কাঠালে বিদ্যমান প্রচুর ভিটামিন-সি,গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের সর্দি-কাশি প্রতিরোধ ও দুর করে ও এবং এসময়ের শরিরের ঘা শুকাতে সহায়তা করে ।

কোষ্টকাঠিন্য দুর করতে -

  কাঠালে রয়েছে অত্যাধিক কার্যকরি  আঁশ সমুহ, যাহা  কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে ভুমিকা রাখতে পারে।

দাত ও হাড়ের সুরক্ষা ও ক্ষয় রোধে -

কাঠালে বিদ্যমান আশাতীত ভিটামিন-ডি ও  ক্যালসিয়াম। যাহা হাড়ের ক্ষয়রোধ ও দাতের ক্ষয় রোধে অত্যন্ত কার্যকর। শরিরের জয়েন্টের ব্যাথা ও সায়েটিকা বাত প্রতিরোধেও কাঠালের ভুমিকা অত্যান্ত গভীর।

রক্তশুন্যতায় -

কাঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ভিটামিন-সি। যাহা দেহের রক্ত বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভুমিকা রাখে।

  বন্ধুরা আজ এখানেই , কথা হবে আগামী পোস্টে , সাথেই থাকুন।

   গ্রন্থনা ও ছবি ডাঃ এজেএম নজরুল কইসলাম

 প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
                  

    
                           

Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।