লাউ খান, ডায়াবেটিস তাড়ান।

লাউ


   
"লাউ পাতার শালি গন্ধ ছড়ানো, কচি  সিদ্ধ পাতার ভর্তা ও চাঁটনি ভোজন রসিকদের জন্য খাবারে এনে দেয় নতুন স্বাদের এক নতুন মাত্রা"

প্রিয় দর্শক, সবাইকে আমার safemedi.blogspot.com এর পক্ষ থেকে সবাইকে  জানাই ছালাম ও শুভেচ্ছা -

আশাকরি সবাই ভালোই আছেন, আমিও ভালোই আছি  
 আজকে আমার লেখার বিষয়ে থাকছে, বিশ্বজুড়ে সকলের পরিচিত এবং সকল ধর্মের অনুসারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য, শীতকালীন এবং উপকারী সবজি "লাউ" সম্পর্কে - 

লাউ/কদু

লাউ,এক ধরনের  লতানো গাছের ফল যাহা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে শব্জি হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত।
খাদ্যপুষ্টিবিদ গন বলেন যে, "লো ক্যালরি লাউয়ে রয়েছে ১৭ ধরনের অ্যামাইনো এসিড যাহা মানবদেহে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত দরকারি ও উপকারী"। এছাড়াও লাউয়ে রয়েছে , ভিটামিন এ, বি ও সি, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, জিংক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি।

অঞ্চল ভেদে লাউয়ের রয়েছে নানান ধরনের বাহারি নাম -লাউ, লাউ কদু, সাচি কদু, পানি কদু, লাউ কুমড়া, সাদা কুমড়া, পানি কুমড়া, আরও কত কি, তবে ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে "সাঁচি কদু" নামেই সর্বাধিক পরিচি 

       লাউ, যার ইংরেজি নাম, Calabash bottle/ Guard/Bottle Guard etc পাতার নাম  Guard Spinach

লাউ এর পুষ্টিগুন

প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে ১৬ কিলক্যালরি খাদ্যশক্তি, পুষ্টি গুন বিচারে যাহা নিম্নরুপ-

* প্রোটিন --------------------------------০.৭ গ্রাম


* কার্বোহাইড্রেট ---------------------৩.৭০ গ্রাম   


* ডায়েটারি ফাইবার -----------------১.৫ গ্রাম  


* ফ্যাট ---------------------------------০.০৩ গ্রাম


* ক্যালসিয়াম --------------------------২৫ মিগ্রা


* পটাসিয়াম --------------------------১৭৫ মিগ্রা


* ম্যাগ্নেসিয়াম --------------------------১২ মিগ্রা


* আয়রন ------------------------------২৪০ মিগ্রা


* ম্যাঙ্গানিজ ------------------------০.০৭০ মিগ্রা


* ফসফরাস ----------------------------১৫ মিগ্রা


* সোডিয়াম --------------------- ---------৩ মিগ্রা


* জিংক ---------------------------------০.৮ মিগ্রা


* থায়ামিন-বি১ --------------------০.০৩০ মিগ্রা


* রিবোফ্লাভিন-বি২ ---------------০.০২৫ মিগ্রা


* নিয়াসিন-বি৩ ----------------------০.৪০ মিগ্রা


* প্যান্টোথেনিক এসিড-বি৫----০.১৪৪ মিগ্রা


* ভিটামিন-বি৬ --------------------০.০৪০ মিগ্রা


* ফলেট-বি৯ -------------------- ৫ মাইক্রোগ্রাম


* ভিটামিন-সি --------------------------৮.৫ মিগ্রা


* পানি --------------------------------------৯০%                       

 ♥  লাউ এর ব্যবহার  

    লাউ গাছের কান্ড, ফল, আগা ,ডগা, পাতা ও ফলের বিচি ও ছোচা (ফলের ছাল) সবই সব্জী , শাক, ভর্তা, চাটনি ও স্যুপ হিসেবে তৈরি করে খাওয়া হয়।

   "লাউ কুমড়ার ছোচা সিদ্ধ করে , শুকনো বিচির শাঁস,  কচি বিচি ও পাতা সিদ্ধ করে ভর্তা ও চাটনি সুস্বাদু এবং  মুখরোচক খাবার তালিকায় রাখা হয়।   

  বিশ্বের সকল মহাদেশে কমবেশি লাউ চাষাবাদ করা হয় এবং লাউয়ের তরকারি উপকারী সবজি হিসেবে    সকল বয়সের মানুষের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত।

লাউ মাছ, মাংস, ডিম সহ সকল সবজির সহিত মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়।

লাউ খিচুড়ি ভারত ও বাংলাদেশ এর পল্লী বাসিদের কাছে এক উপাদেয় ও লোভনীয় খাবার। শীতকালে এই খিচুড়ি খেতে কত যে মজা, যারা খেয়েছে তারাই শুধু এর বর্ণনা দিতে পারে অন্যথায় আফসোস থেকেই যায়।       

   "লাউ পাতার শালি গন্ধ ছড়ানো, কচি  সিদ্ধ পাতার ভর্তা ও চাঁটনি ভোজন রসিকদের জন্য খাবারে এনে দেয় নতুন স্বাদের এক নতুন মাত্রা 

   লাউ মাছ, মাংস, ডিম সহ সকল ধরনের শব্জির সাথে মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায় এবং তাতে অন্যান্য শব্জির পুষ্টি ও গুনগত মান বাড়িয়ে যায় বলে পুষ্টিবিদগন মত দিয়ে থাকেন ।

 মাথা ঠান্ডা রাখার তেল তৈরীতে লাউ ও পরিপক্ব লাউ  বীজের শাঁসের সর্বাধিক ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে।
যৌন শক্তির ওষুধ তৈরীতে লাউ বীজের শাঁসের রয়েছে একছত্র অধিপত্যি।

এ সবজিতে ক্যালরী কম ও চর্বি  না থাকায় হৃদরোগী, হাইপারটেনশন(ব্লাড প্রেসার),গ্লুকোজাধিক্য(ডায়াবেটিস) রোগীদের জন্য মহৌষধই শুধু নহে ,আজীবনের পথ্যও বটে ।

পরিপক্ব লাউ এর খোলকে বোঁয়াশ(বোতল) বলা হয়ে থাকে। যার জন্যই হয়ত লাউ ইংরেজদের কাছে "বোতলগার্ড" হতে পেরেছে           

কিভাবে বোঁয়াস তৈরি করা হয়-  

 বোঁয়াশ

    পরিপক্ব লাউয়ের তৈরি গৃহিণী পর্যায়ে উদ্ভাবিত , তৈরীকৃতলাউ  আকৃতির মত দেখতে , এক ধরনের হালকা ওজনের বোতল সাদৃশ্য পাত্র বিশেষ। গৃহিণীগন পরিপক্ব লাউয়ের বোটার চতুর্দিকে গোলাকারেে কেটে ভিতরে সামান্য কিছু গর্তের মতো করে নেয় , এবার উক্ত গর্তে কিছু পরিমান ছাই ও পানি দিয়ে ভরে কয়েক দিন রেখে দিলে, ভিতরের শাঁসাংশ পঁচে পানি হয়ে যায়, শুধু বিচি গুলো ভাল থাকে । ভিতরের পচা পানি ফেলে দিয়া এবং  বিচি গুলো আগামী মৌসুমে রোপনের জন্য রৌদ্রে শুকাইয়া সংরক্ষণ করা হয় । এবার পাত্রটি ভালোভাবে পরিস্কার করে রোদে শুকিয়ে নিলেই "বোয়াশ" তৈরি হয়ে গেল। এখন সুচতুর গৃহিনীরা এর ভিতর শুকনো খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করবেন অনায়াসেই।

   বাঙ্গালী কবির লেখনীতে এ ভাবেই ফুটে উঠেছে লাউয়ের "বোঁয়াস" হওয়ার সহিত বৈরাগি হওয়ার "কারিশমা'

   " সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগি ,
    লাউয়ের আগা খাইলাম,
    ডগাগো গো খাইলাম,
    লাউ দিয়া বানাইলাম "ডুগডুগি"।।
    সাধের লাউ ......  ......  ...... ।

  কবি তাঁর গানের মধ্যে, লাউয়ের আগা ও ডগা খাওয়ার কথা এবং বোঁয়াশ দিয়ে ডুগডুগি বানানোর কথা অকপটে লেখে গেছেন ।

  সত্যিই যেন "বোয়াশ" ছাড়া ডুগডুগি বা এক তারার কাংখিত  সুর ও লয় কোন ভাবেই মিলতে চায় না।

 এছাড়াও আগেকার দিনে "বোয়াশ" দিয়া "দোতারা", "সেতার" ও আরও কয়েক ধরনের বাদ্যযন্ত্র বানানো হলেও কালের বিবর্তনে তা এখন অনকাংশই কাঠ দিয়া এবং যান্ত্রিক উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে।

লাউয়ের খাদ্যোপকারিতা      

@ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউ এর ভুমিকা-    

    লাউ লোক্যালরি জাতের উচ্চমানে উপাদেয় এক ধরনের সবজি। এতে প্রচুর পরিমানে পানি , উপকারী আশ, প্যংক্রিয়াসের ক্ষমতা বাড়ানোর মত লঘু প্রাচ্য উপাদান সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীগন নিয়মিত খাবার তালিকায় লাউ বেশি পরিমাণে   রেখে কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে খাদ্য গ্রহণ করলে আজীবন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে খাদ্য ও পুষ্টিবিদগন জোরালো মত দিয়া থাকেন। এতে প্যাংক্রিয়াস সুস্থ থেকে, ইনসুলিন হরমোনের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আর কোন বাধা থাকেনা।    

@ শীত কালের সর্দি-কাসিতে লাউ-  

লাউ সিজেনাল বিশেষ করে শীত কাল শুরুর প্রাক্কালে সর্দি-কাশি ও জ্বর হওয়া প্রতিরোধে খুবই কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে ও প্রতিকার করিতে খুবই কার্যকর। এসময় শুরু থেকে লাউয়ের তরকারি খাবার তালিকায় রাখা হলে শীতকালীন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা পাওয়া যাবে।  

@ হৃদপিণ্ডের সমস্যা প্রতিরোধে -

লাউয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, হৃদপিন্ড সুরক্ষাকারী উপাদান ও খনিজ সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচলের বাধা দুর করে এবং এর  স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

@ ত্বকের আদ্রতা ও উজ্জ্বলতা  ধরে রাখতে -

লাউয়ে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে পানি, ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখার উপাদান সমুহ, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় উপাদান সমুহ। এসব উপাদান ত্বকের মৃতকোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষের বসতি স্থাপন করায় এবং ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা ধরে রাখে।     


লাউ
 
@ উচ্চরক্তচাপ  কমাতে -

লাউয়ে ক্যালরী শক্তি নাই বললেই চলে, সর্করাও অত্যন্ত কম আছে শুধুই উপকারী খনিজ, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-বি৬,   এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং রক্তনালি পরিস্কার করার মত শক্তিশালী সব উপাদান সমুহ। এসব সক্রিয় উপাদান রক্ত নালীর, রক্ত চলাচলের বাঁধা সমুহ সহজেই দুর করতে পারে। ফলে রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে                                           

@ মাথা ঠান্ডা রাখতে -

 লাউয়ের সব মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখার উপাদান সমুহ, মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল রাখতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ , মিনারেল ও ভিটামিন সমুহ, মাথা ঠান্ডা রেখে সুনিদ্রা আনয়ন করে এবং অবাঞ্ছিত ভাবনা গুলিকে কাছে ঘেষতে দেয়না।   

আরও পড়ুন-- কাঠালের উপকারিতা          

@ পেটের পীড়া ও কোষ্ঠকাঠিণ্যে -

   লাউ কদুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে, শক্তিশালি আঁশ ও অন্ত্রের সুরক্ষাকারী অ্যাসেনশিয়াল উপাদান সমুহ। এসব উপাদান পেটর পীড়া সারাতে পারে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে খুবই কার্যকর।   


লাউ
@ কিডনির সুরক্ষায়- 

লাউ  পানি বহুল সবজি হওয়ায় কিডনির সমস্ত বাধা দুর করে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং দেহকে ডিটক্সিফাইড করে রোগ মুক্ত রাখে।                               

 @ মেদ ভুড়ি কমাতে লাউ- 

কিছুদিন ক্যালরিশক্তি ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খেয়ে লাউ তরকারি ও স্যুপ বেশি খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করলে আপনি হয়ে উঠবেন স্লিম ও সুঠাম দেহের  অধিকারি। এছাড়াও এর ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ, প্রচুর পরিমানে পানি, এন্টিঅক্সিডেন্ট এসব উপাদান কাজ তো করবেই।       
লাউ নিয়ে লেখা আজ এখানেই, আবার কোন নতুন কোন লেখা নিয়ে আসব শীঘ্রই। ততক্ষণ সাথেই থাকুন।

লেখা ও ছবি - ডাঃ নজরুল

 প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল  চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

                             

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।