পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।


পঞ্চমুখীী কচু

 ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, পঞ্চমুখি কচু রুক্ষ, কষায়, কটুরস, কন্ডুকরক  , বিষ্টম্ভ, অগ্নিউদ্দীপক , বিশদ গুনযুক্ত, রুচিকর ও লঘু। 

পঞ্চমুখী কচু।
 প্রিয় ব্লগার ও পাঠক,শুভেচ্ছ রইলো সবার প্রতি।
     আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ব্যাতিক্রমি নামের একটি কচু সম্পর্কে, যার নাম-পঞ্চমুখী কচু
   পাঁচটি মুখাকৃতির মত দেখতে বলেই হয়তো এ কচুর নামটি পঞ্চমুখি হয়েছে।
  হিন্দু ও সংশ্লিষ্ট ধর্মের অনুসারীগন বিশ্বাস করেন যে তাদের ধর্মের পূজনীয় দেবতা শ্রী হনুমান ও শ্রী গনেশ চরিত্রের পঞ্চমুখাবয়ব থেকে এ কচুর নাম"পঞ্চমুখী" করন করা হয়েছে।
 স্থান ভেদে পঞ্চমুখি কচুর আরও অনেক নাম রয়েছে, যেমন -
 খারকোন,কালি,ওল,ওলি, ওলট, হনু মুখি, গনমুখি,  ইত্যাদি ।
ইংরেজী নাম,Five-FaceTaro
  (Panchamukhi) 


  হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন "পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ" নামে এক ধরনের "মালা" শান্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন ।  তাঁরা মনে করেন, এ "রুদ্রাক্ষ" শান্তিদায়ক, পাপ নাশক ও "গো ব্রাহ্মণ" হত্যাকারীদের পাপ মোচনে সহায়ক। তাঁদের ধর্মমতে পঞ্চমুখি রুদ্রাক্ষ শরীরে ধারন করলে, মানুষের শ্রী বৃদ্ধি পায় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ধর্মীয় অনুশীলন সহজতর হয়। এ সম্প্রদায়ের লোকজন "পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ"কে স্বয়ং "কালাগ্নির" শক্তি মনে করেন । তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, এ "মালা" একসাথে তিনটি ধারন করলে ,সহজেই "পাপ" থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
           
  সব্জী ও ঔষধ হিসেবে পঞ্চমুখি কচুর ব্যবহার  ছাড়াও তরকারি , তেলে ভেজে, ডাল তৈরি করে ,শুকনো কচুর পাউডার তৈরি করে , লবন ও তেলের সাথে ঝলসেও এ কচুৃ খাওয়া যায়।

  পঞ্চমুখী কচু মাছ মাংস, ডিম সহ অন্যান্য সকল সব্জির সহিত মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।   
            
 ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, পঞ্চমুখি কচু রুক্ষ, কষায়, কটুরস, কন্ডুকরক  , বিষ্টম্ভ, অগ্নিউদ্দীপক , বিশদ গুনযুক্ত, রুচিকর ও লঘু       

প্রিয় পাঠক     
আপনারা নিশ্চয় জানেন, সারা দুনিয়ায় বহু জাতের ও ধরনের কচু দেখা যায়। স্থান ভেদে তাদের আকৃতি, রঙ ও নামেরও ভিন্নতা রয়েছে ।
   পঞ্চমুখী কচুর মাটির নিচের পাঁচ মুখের গোলাকার অংশটুকু সব্জী হিসেবে খাওয়া ও ভেষজ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে, মাটির নিচের এ সব্জীটি ইদানীং কিছুটা হলেও পরিচিতি পেতে শুরু করেছে এবং গৃহস্থ পর্যায়ে সামান্য হলেও বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছ। বাংলাদেশে ইদানিং মাঝে মধ্যে অল্প সংখ্যক হাট-বাজার ও শহরের আলগা দোকান গুলিতে অল্পবিস্তর দেখা যায় ।                             
  পঞ্চমুখি কচু এশিয়ার কোন কোন দেশে গৃহস্থ পর্যায়ে, বাড়ির আঙিনায় শখের বসে রোপণ করা হয় এবং সব্জি ও ভেষজ ঔষধ হিসেব  পরিবারের কিছু চাহিদা মেটানো হয়।

খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের বর্ণনা মতে, ১০০ গ্রাম পঞ্চমুখী কচুতে রয়েছে ৫৬ কিলক্যালরি খাদ্যশক্তি -

 * প্রোটিন------------------------------------- ১.৫ গ্রাম

* কার্বোহাইড্রেট-  -------------------------১৯.১ গ্রাম

* ফ্যাট -----------------------------------------১.৮ গ্রাম

* আঁশ------------------------------------------২.৮ গ্রাম

* ভিটামিন-এ--------------------------- ৪৫০ আইইউ

* থায়ামিন -----------------------------------১.৮ মিগ্রা

* নিকোটিন এসিড-------------------------১.২ মিগ্রা

* ক্যালসিয়াম --------------------------------৬০ মিগ্রা

* পটাশিয়াম-------------------------------- ১৮০ মিগ্রা

* ফসফরাস ---------------------------------- ৪০ মিগ্রা

* পানি-------------- ----------------------------- ৮৫%               

   এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ,ডি ও সি, আঁশ , ক্যালসিয়াম,  পটাসিয়াম , আয়রন , নিউট্রিশন ও ৮৫ % পানি ।
ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ও বিভিন্ন উৎস থেকে যতদূর যানা যায়, পঞ্চমুখী কচু মানবদেহের জন্য নিম্ন বর্ণনা মতে কাজ করতে পারে। যেমন-

★ অর্শরোগীর কোষ্ঠকাঠিন্যের সারাতে -

পঞ্চমুখি কচু অর্শরোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে খুবই কার্যকরী, এর প্রচুর আঁশ ও শক্তিশালী  এন্টি অক্সিডেন্ট সমুহ, মেমব্রেন কে শক্তিশালী করে, মিউকাস বাড়াতে সাহায্য করে ফলে সহজেই মল নির্গত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর হয়। নতুন বা পুরাতন অর্শরোগে, তিন-চার টুকরা কচুর ফালি আগুনে ঝলসে,বিট বা সৈন্ধবলবণ মিশিয়ে কিছুদিন খাইলে উপকার পাওয়া যায়।         

★ হৃদপিণ্ড সুরক্ষায় পঞ্চমুখি কচু -

  পঞ্চমুখি কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি এক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ডি ও পটাসিয়াম । যাহা মানবদেহের হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের সাধারন বাধা সমুহ সহজেই দুর করতে পারে এবং এতে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ সচল থাকতে আর কোন বাধা থাকেনা। এসব উপাদান হার্ট ফেইলার ও কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যার ঝুকি অনেকাংশে কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালনের সক্ষমতা রাখে ।

★ ওজন কমাতে এ কচুর ভুমিকা -

     পঞ্চমুখি কচুতে ক্যালরি পরিমাণ অতিনগন্য এবং  অন্যান্য দুষ্প্রাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমানে থাকার কারনে সহজেই শরিরের মেদ ঝরাতে পারে। অন্যান্য খাবারের সহিত নিয়মিত কিছু দিন খাইলে শরীরের মেদ ভুড়ি কমবে এবং ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। প্রাপ্তি সাপেক্ষে ডায়েট লিস্টে রেখেই দেখুন কি কি উপকার দেখতে পান।   
   
অতিরিক্ত পরিশ্রমে এ কচু-   

  এতে রয়েছে গ্লাইসোমিক ইনডেক্স ফ্যাকো নামক এক ধরনের শক্তিশালি ও দুষ্প্রাপ্য  এন্টিঅক্সিডেন্ট । যাহারা বেশি কায়িকপরিশ্রম করে এবং অ্যাথোলেটদের জন্য এটি এক ধরনের উপাদেয় খাবার। এটি শরিরের মাংসপেশি গুলোকে শক্তিশালি করে তোলে। ভাল থাকুন কচু খান।

আরও পড়ুন-- করলার উপকারিতা 

★  হজমশক্তি বাড়াতে -

পঞ্চমুখিতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে আঁশ হজমশক্তি বাড়ায় এবং বেশিক্ষণ পেটে থাকায় শরীরে বেশিক্ষণ শক্তি পাওয়া যায়। পেট ঠান্তা থাকে, পেটের পুরাতন গ্যাস সহজেই নিরসন করায় এবং পাকস্থলী পরিস্কার রাখে।

★ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে -

  পঞ্চমুখিতে বিদ্যমান ১৮ ধরনের অ্যামাইনো এসিড,  প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন। যাহা রক্তনালীর বাধা সমুহ সহজে দুর করে, রক্তের স্বাভাবিক সরবরাহ ঠিক রাখে। ফলে রক্তচাপও স্বাভাবিক হয়ে আসে।

★ মেদ ভুড়ি কমাতে পঞ্চমুখি-

 পঞ্চমুখিতে বিদ্যমান এন্টিএজেন্ট সমুহ মানবদেহের অযাচিত অক্সাইড সমুহ মুক্ত করতে এবংঅতিরিক্ত রস (পানি) সহজে ঝরিয়ে ফেলতে অত্যন্ত কার্যকর। ইহা মায়েদের গর্ভকালিন পা ফোলা সহ কিডনির সমস্যাজনিত মুখমণ্ডল ও পা ফোলা রোগে উপকারী পথ্য। এর এন্টিএক্সিডেন্ট সমুহ প্রসাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, শরীরের দুষিত পদার্থ বাহির করিয়ে দেয়।

★ অপকারিতা -
 কচু মাত্রই কমবেশি অক্সালেটের দানা রয়েছে।  অনেক সময় রান্নার ব্যাতিক্রমে খাওয়ার সময় গলা চুলকানি হতে পারে । সাবধানে নিয়ম মেনে রান্না করে খেতে হবে ও শিশুদেরকে সাবধানে পরিবেশন করতে হবে।

আমার লেখাটি পড়ে ভাল লাগলে, লাইক ও কমেন্টে আমাকে উৎসাহিত করবেন বলে আশা করছি।   

 আজকের লেখা এই পর্যন্ত, আগামী পোস্ট পর্যন্ত সাথেই থাকুন, এই কামনায় -

ছবি ও আর্টিকেল  - ডাঃ এজেএম নজরুল।

   প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।                 

Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।