ফুলকপি খান, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ সরান





. কালো কচুর চেয়ে দেড় গুন বেশি

. সবুজ কচুর  চেয়ে আড়াই গুন বেশি
. লাল শাকের চেয়ে দুই গুন বেশি
. মুলা শাকের চেয়ে পঁচিশ গুন বেশি
. দুধের চেয়ে পাঁচ গুন বেশি 
. পুই ও পাট শাকের চেয়ে নয় গুন বেশি
. ডাটা ও পালংশাকের চেয়ে আট গুন বেশি

ফুলকপি

ফুলকপি অতি পরিচিত এক ধরনের ফুল জাতের কম ক্যালরি যুক্ত শব্জি । এটি মুলত শীতকালিন শব্জি হলেও আজকাল সারা বছরই হাটে বাজারে ও সহরের মেগা শপ গুলোতেও কমবেশি দেখা যায়।

  বিশ্বের সব মহাদেশে কমবেশি ফুলকপি চাষাবাদ করা হয় এবং সকল ধর্মের মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য।

যতদুর জানা যায়, প্রথমে সাইপ্রাসীয় পতিত ভুমিতে বুনো হিসেবে ফুলকপি জন্মিতে দেখা যায়। সাইপ্রাসের বাসিন্দারা এটিকে সব্জি হিসেবে প্রথম খাওয়া শুরু করে। তারপর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ইতালিতে এর অস্তিত্ব খুজে পায় সেখানকার বাসিন্দারা। তারাও এটাকে সবজি হিসেবে খাওয়া সহ বাড়ির আঙিনায় দু-চারটি করে বুনো চারা এনে রোপন করতে শুরু করে। ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন আমলে, তারাই সর্ব প্রথম ফুলকপি নিয়ে আসেন বলে জানা যায়। তারপর থেকে উপকারী সবজি হিসেবে ফুলকপির চাষ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। বর্তমানে সকল মহাদেশে ফুলকপি বানিজ্যিক ভাবে চাষ হতে থাকে। সে সময় এর আরও একটি সবুজ রঙের জাতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। যাকে ব্রোকোফ্লাওয়ার" বলা হয়ে থাকে। বর্তমান দুনিয়ায় যা "ব্রুকলি বা ব্রুকলিন" নামে সবার কাছে পরিচিত।এটি ফুলকপির চেয়ে তিন গুন বেশি শক্তিশালি হলেও এর মৃদু গন্ধ ও বানিজ্যিক ভাবে ব্যাপক চাষ না হওয়ায় সবার দোরগোড়ায় এখনো পৌঁছাতে পারেনি।     
                                             
  ফুলকপি সব্জি হিসেবে রান্না করে এবং কাঁচা ফুলও খাওয়া যায়।  এছাড়াও সালাদ, পাকোড়া, ফ্লোরি, স্যুপ তৈরি করেও খাওয়া যায়।

ফুলকপি মাছ, মাংস, ডিম সহ সকল সবজির সাথে মিশিয়ে মজাদার তরকারি রান্না করা হয়। খেতে মজাদার, দেখতে রুচিকর, রান্না প্রনালী অনেক সহজ হওয়ায়, রাধুনি সহ সকল বয়সীদের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত। 

  খাদ্য মান বিশ্লেষণ, বিবেচনা এবং তুলনায় আনলে বুঝার অবকাশ থাকেনা যে , ফুলকপিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে-

. কালো কচুর চেয়ে দেড় গুন বেশি
. সবুজ কচুর চেয়ে আড়াই গুন বেশি
. লাল শাকের চেয়ে দুই গুন বেশি
. মুলা শাকের চেয়ে পঁচিশ গুন বেশি
. দুধের চেয়ে পাঁচ গুন বেশি   
. পুই ও পাট শাকের চেয়ে নয় গুন বেশি
. ডাটা ও পালংশাকের চেয়ে আট গুন বেশি


 পাতায় ক্যালসিয়াম এর পরিমান-
. সবুজ কচু শাকের চেয়ে চারগুন, 
. ডাটা শাকের চেয়ে দুইগুন,
. মুলা শাকের চেয়ে সাড়ে বারোগুন,
. কলার চেয়ে দশগুণ,
. সবুজ কচু শাকের চেয়ে সাড়ে চারগুণ এবং
. পালং শাকের চেয়ে সাড়ে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে।                             

  ফুলকপির গরম তরকারির চেয়ে ঠান্ডা তরকারি বেশি সুস্বাদু। এর কচি পাতাও শাঁক হিসেবে বেশ ভাল লাগে।

  ফুলকপিকে আমরা শব্জি হিসেবে জানলেও,  স্বাস্থ্য রক্ষায় এর রয়েছে অনন্য ভুমিকা।
হৃদপিণ্ড সুরক্ষা ও যৌনশক্তি বাড়াতে যে কয়েকটি বাছাই করা খাদ্য আছে তার মধ্যে অন্যতম একটির নাম ফুলকপি । "ব্রুকলি"র পরেই যার স্থান। 

           

খাদ্য ও পুষ্টিবিদগনের মতে ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য ফুলকপিতে রয়েছে ২৬ কিলক্যালরি খাদ্যশক্তি। যাহা খাদ্যমান বিশ্লেষণে নিম্নরুপ-

* কার্বোহাইড্রেট -------------------------------৫ গ্রাম   

* স্বেতসার -------------------------------------৯ গ্রাম 

*  চর্বি ---------------------------------------০.২৯গ্রাম

* প্রোটিন ---------------------------------------২ গ্রাম  

*  আশ---------------------------------------২ .৪ গ্রাম

* সুগার --------------------------------------১.৫ গ্রাম

*  খনিজ লবণ ------------------------------- ২ গ্রাম

* ভিটামিন-বি৬ -----------------------------১১ মিগ্রা
  
* থায়ামিন ----------------------------------০.৫ মিগ্রা

* প্যান্টোথেনিক এসিড -------------০.৬৭০ মিগ্রা 
  
* ফোলেট ------------------------০.৬০ মাইক্রোগ্রাম 

* নিয়াসিন -----------------------০.৫০ মাইক্রোগ্রাম  

* ক্যালসিয়াম -----------------------------২৩০ মিগ্রা

* ম্যাগনেসিয়াম ----------------------------৩.৫ মিগ্রা

* আয়রন -----------------------------------২.৭ মিগ্রা
   
* সোডিয়াম ---------------------------------৩২ মিগ্রা 

* পটাসিয়াম ----------------------------------৩ মিগ্রা  
 
* আয়রন ------------------------------------৪০ মিগ্রা
  
*  পানি -------------------------------- ------৯০ ভাগ

 এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, যথেষ্ট পরিমাণ সালফার , পটাশিয়াম , ফসফরাস ও খনিজ উপাদান।

 খাদ্য ও পুষ্টিবিদগন ফুলকপির উপকারীতা
সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা করেছেন -

♥ হৃদপিন্ডের সুরক্ষায়-

  ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, হৃদপিণ্ড সুরক্ষা কারি অ্যাসেনশিয়াল সব উপাদান এবং দুস্পাপ্য মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। যাহা  মানবদেহের হৃদপিন্ডের সুরক্ষা দিতে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে। ফলে হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে আর বাধা থাকেনা। ফুলকপির এসব উপাদান কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা প্রতিরোধেও সহায়তা করে।     
                      
বার্ধক্য রোধ ও যৌবন ধরে রাখতে-    

  ফুলকপিতে রয়েছে , যৌন শক্তি উদ্দেপক উপাদান সমুহ, এন্টিএজিং, সেক্সহরমোনাল এবং স্টিমুলেন নামক শক্তিশালি এন্টিএক্সিডেন্ট সমূহ।  যাহা মানবদেহের রক্তে সেক্স হরমোন সরবরাহ ও স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ভুমিকা রাখে।প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফুলকপি রেখে, যৌনজীবন সঠিক ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। ফুলকপি খান যৌবন ধরে রাখুন। ফুলকপিতে এন্টিজেন ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট ,ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন,রুটিন,সিনামেক্স, ক্যাতমফেরল  ও কোথারসেটিন  যাহা মানবদেহকে ফ্রি রেডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করে বার্ধক্য ঠেকায়, বুড়িয়ে যাওয়া টিস্যু গুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে ।   

♥ হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধে -

হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধে ফুলকপির, ফুল ও পাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম, হাড় ও দাত ক্ষয়রোধকারি উপাদান সমুহ, ইনফ্লমেটরি উপাদান সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এসব সক্রিয় উপাদান  হাড় ও দাঁতের ক্ষয়রোধে অত্যন্ত কার্যকরি। বাত, জয়েন্টের ব্যাথা এবং সায়েটিকা প্রতিরোধ এবং সারিয়ে তুলতে পারে এসব উপাদান। গর্ভের ভ্রুন ও শিশু-কিশোরদের হাড় গঠনে ও বয়স্কদের হাড় ও দাঁত ক্ষয়রোধে ফুলকপির জুড়ি মেলা ভার।  



♥ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে-

ডায়াবেটিস রোগীগন ফুলকপি বেশি পরিমাণে খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। লো-ক্যালরি ও সুগার না থাকায় ফুলকপি শুধু ডায়াবেটিসে উপকার করতে পারলেও কোন ক্ষতি করনা। এতে প্যাংক্রিয়সও স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে।    

আরও পড়ুন-- বেগুনের উপকারিতা                                                 
♥ মেদ ভুড়ি ও ওজন কমাতে- 

  ফুলকপি একটি লো-ক্যালরি উপাদেয় সবজি । এতে    রয়েছে প্রচুর পরিমানে আঁশ, পটাসিয়াম, মেদ ঝরানো উপাদান সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এসব শক্তিশালি মেদ ঝরানো উপাদান সমুহ মানবদেহের মেদ ঝরিয়ে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফুল কপি বেশি আঁশযুক্ত ও পানি সম্বলিত সবজি হওয়ায় বেশিক্ষণ পেটে থাকার কারনে ক্ষুধা ও পিপাসায় কম খাওয়া পড়ে। এভাবে প্রতিদিন কম খেলে ওজন কমতে বেশি সময় লাগবেনা। ফুলকপি খান, ওজন কমান।     
            
♥ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে-

  ফুলকপিতে বিদ্যমান, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ ,    ভিটামিন সি, খনিজ, কোলেস্টেরল ঝরানো উপাদান সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। যাহা মানবদেহের অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর অক্সাইড সমুহ সহজেই ঝরিয়ে ফেলতে পারে।

 এতে মানবদেহের রক্ত নালিতে উপকারী
কোলেস্টেরল(এইচডিএল) সরবরাহ নিশ্চিত হয় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল(এলডিএল)এর বংশ উজাড় করে ফেলে। এর ফলে হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচলের  সকল বাধা দূর হয় ।ফুলকপি খান কোলেস্টেরল ঝরিয়ে ফেলুন ।   
 ♥ মানবদেহ রক্ষায় ফুলকপি -

  ফুলকপিতে রয়েছে ,ইন্ডোল - ৩, এন্টি ইন্ফ্লামেন্ট,  কার্বিনাল বা ১৩-সি উপাদান সমুহ, যাহা মানবদেহের ক্ষতিকর রেডিকেল সমুহ মল,মুত্র ও ঘর্মের মাধ্যমে বের করে দেয়। ইন্ফ্লামেটরি বিএএল নামের একটি সক্রিয় যৌগ সরাসরি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।  

   কপিতে বিদ্যমান শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি মানবদেহ ডিটক্সিফাইড করে এবং অবাঞ্ছিত অক্সাইড সমুহ দুর করে  বিষমুক্ত রাখার দায়িত্ব পালন করে । ফলে দেহ থাকে বিষ মুক্ত । নিরোগ থাকুন নিয়মিত খাবার তালিকায় ফুলকপি রাখুন।





 

♥ পেটের পীড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যে -      

   বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থার হেলদিয়েস্ট ফুড'র"মতে সালফোরাফেল নামক এক ধরনের দুস্পাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং পাকস্থলির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এমন উপাদান সমুহ। হেলিকোব্যাক্ট ও পাইলারি নামের এসব উপাদান সমুহ পাকস্থলী ও আশপাশের অঙ্গ সমুহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধংশ করে এবং মিউকাস মেমব্রেনকে শক্তিশালী ও সক্রিয় করে তোলে। ফলে পুর্বের জমে থাকা কঠিন আবদ্ধ মল ও দুর্গন্ধ যুক্ত গ্যাস নিরসনে আর কোন বাধা থাকে না।
পেটের পুরাতন পীড়া এবং সকল ধরনের পাতলা পায়খানা কমাতে পারে ফুলকপি, এজন্য অন্যান্য খাবার ও ওষুধের সাথে ঝলসানো বা রান্না করা তরকারি খেলে উপকার পাওয়া যাবে। ফুলকপি খান, পেটের সমস্যা তাড়ান।                 

♥ স্বরনশক্তি বৃদ্ধি করে ফুলকপি-  

  স্বরনশক্তি বৃদ্ধিতে,  ফুলকপির কোলাইন নামক  যৌগ, দুস্পাপ্য খনিজ, মস্তিষ্কের কোষ সক্রিয়কারি উপাদান সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ মস্তিষ্কেের       গঠন প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে অত্যন্ত কার্যকরি ।এসব উপাদানে ভরা ফুলকপি, গর্ভকালিন সময়ে মায়েরা নিয়মিত খেলে, আগন্তক শিশুও স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন হয়ে জন্ম নিতে পারে। বাড়ন্ত শিশুর মস্তিষ্ক গঠন এবং কিশোরদের মেধা বিকাশ সহ বয়স্কদের স্মৃতি ভুলে যাওয়া সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ও সমাধান দিতে পারে ফুলকপি। খাদ্য তালিকায় ফুলকপি রেখে পরিবারের সবার মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিন।                     

♥ ফুলকপির অপকারিতা-

   যাদের থাইরয়েড গ্রান্ডের  ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের জন্য ফুলকপি বেশি না খাওয়াই ভাল। তাতে ক্ষতি হাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই যুক্তিযুক্ত।




 
   
        ফুলকপির ফুল, সবার ধমনীতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করুক , এই কামনায় আজ এখানেই শেষ করছি , আবার কোন নতুন পোস্ট  নিয়ে  আসা পর্যন্ত,সাথেই থাকুুন। 

ছবি ও লেখা, ডাঃ নজরুল ইসলাম 

লেখক, প্রাক্তন শিক্ষক, হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক, ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট। 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।