বেগুন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মহৌষধ।
মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের রমজান মাসের দিন শেষে ইফতারের সময়, বেশন ও বেগুন দিয়া তৈরি ,তেলে ভাজা "বেগুনি" নামে এক ধরনের "চপ" খুবই জনপ্রিয় । যাহা ইফতারির সাথে না থাকিলে, রোজাদারদের "ইফতারি" যেনো পরিপূর্ণই হয়না।
বেগুন
বেগুন বিশ্বজুড়ে পরিচিত একটি শব্জির নাম। বিশ্বের সকল মহাদেশে কমবেশি বেগুন চাষ হয়। পৃথিবীতে নানা রঙের বেগুনের দেখা মিললেও আসলে বেগুন কিন্তু তার নিজ রুপ "বেগুনী" রঙ নিয়েই বিশ্বখ্যাত। "রঙধনু"এর ৭টি রঙের ৩ নম্বর রঙের নামও "বেগুনী", যাহা এই বেগুনের নাম থেকেই উৎপত্তি এবং বেগুনের একটি "স্বতন্ত্র" রঙের নাম, "বেগুনী রঙ"
আকার আকৃতি ও রঙ ভেদে "বেগুন"এর অনেক নাম আছে, যাহা ভারত ও বাংলাদেশর, বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে নিম্নরুপ, তালের মত গোল বেগুনকে "তাল বেগুন", ডিমাকৃতি হলে "ডিম বেগুন", কেজি ওজনের মত বড় বেগুনকে "কেজি বেগুন", গরুর শিং আকৃতির হলে " শিং বেগুন", চোখের মত রং হইলে "নয়নতারা বেগুন", হালকা বেগুনী রং হলে "শ্যাকা বেগুন" ,ঈশ্বরদীতে উদ্ভাদিত বলে "ঈশ্বর্দী বেগুন" এছাড়াও "লক্ষা", " নাটফরিয়া", "ইসলামপুরী", " নয়ন কাজল" এবং এলাকা ভেদে আরও অনেক নাম রয়েছে আমাদের চিরচেনা এই বেগুন গুলির।
যতদুর জানা যায় "বেগুন গাছ" প্রথমের দিকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বুনো হিসেবে জন্মিত। পরে সকল মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারত ও বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাষাবাদ হলেও অন্যান্য মহাদেশেও সমান তালে চাষ হয় বলে জানা যায়।
ইংরেজীতে বেগুনকে বলা হয় , Eggplant , aubergine , Brinjal etc .
নাম "বেগুন"(গুন নাই যার) হইলেও আসলে শব্জিটি কিন্তু অত্যন্ত গুনে ভরা ।
বেগুন মাছ, মাংস ,ডিম সহ সকল শব্জির মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও বেগুনের ভাজি , ভর্তা, চাটনি, ডাল, ফ্লোরি, চপ সহ অনেক পদের খাবার তৈরি করা হয় ।
"মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের রমজান মাসের দিন শেষে ইফতারের সময়, বেশন ও বেগুন দিয়া তৈরি ,তেলে ভাজা "বেগুনি" নামে এক ধরনের "চপ" খুবই জনপ্রিয় । যাহা ইফতারির সাথে না থাকিলে, রোজাদারদের "ইফতারি" যেনো পরিপূর্ণই হয়না।
খাদ্য ও পুষ্টিমানের বিচারে, প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে,২৬ কিলক্যালরি শক্তি।
খাদ্য ও পুষ্টিমান বিচারে যাহা নিম্নরুপ -
* প্রোটিন ------------------------------------- ০.৮০ গ্রাম
* চিনি ------------------------------------৩.৫০ গ্রাম
* স্নেহ পদার্থ ---------------------------০.২০ গ্রাম
* কার্বোহাইড্রেট ------ ------------------ --৬ গ্রাম
* আশ---------------------------------------৩.৫ গ্রাম
* ভিটামিন-এ -----------------------১২২ আইইউ
* থায়ামিন-বি১----------------------০.০৪০ মিগ্রা
* রিবোফ্লাভিন-বি২-----------------০ .৩৮ মিগ্রা
* নায়াসিন-বি৪---------------------০.৬৫০ মিগ্রা
* প্যান্টোথেনিক এসিড-বি৫--- ০.০৯০ মিগ্রা
* ফলেট-বি৯ ----------------------------২৫ মাগ্রা
* ভিটামিন সি-------------------------- ২.৫ মিগ্রা
* ভিটামিন-ই ---------------------------০.৪ মিগ্রা
* ভিটামিন-কে -------------------------৩.৮ মিগ্রা
* ক্যালসিয়াম ---------------------------১০ মিগ্রা
* ম্যাগনেসিয়াম -------------------------১৫ মিগ্রা
* ম্যাঙ্গানিজ ------------------------০.২৩০ মিগ্রা
* পটাসিয়াম ---------------------------২২৯ মিগ্রা
* ফসফরাস ----------- ------------- ২৫ মিগ্রা
* লোহা ---------------------------------০.২৪ মিগ্রা
* নিকোটিন-------------------------- ---০.৮ মিগ্রা
* ফসফরাস -----------------------------২৫ মিগ্রা
* পানি ----------------- ---------------- --৮৫ ভাগ
★★উপকারিতা
★ ক্যান্সার প্রতিরোধে-
ক্যান্সার প্রতিরোধে বেগুনে রয়েছে, অ্যান্থোসায়ানিন ও ক্লোরোজেনিক নামক দুষ্প্রাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ভিটামিন-সি । এসব শক্তিশালি উপাদান সমুহ, মানবদেহের ফ্রীরেডিকেল সরিয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে প্রদাহ মুক্ত রাখে। ফলে টিউমার ও ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ হয় এবং নতুন ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি হতে দেয়না। এতে স্তন ক্যান্সারের ঝুকি অনেকাংশেই কমে যেতে পারে।
★ ওজন কমাতে বেগুনের ভুমিকা -
ওজন কমাতে বেগুনের রয়েছে শক্তিশালি ভুমিকা । খাদ্য ও পুষ্টিবিদগন বলেন, বেগুনে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ও ভিটামিন-সি এবং (Factors of late digestion)দেরিতে হজম হওয়ার ফ্যাক্টর সমুহ। এসব কার্যকরীী উপাদান সমুহ থাকার কারনে বেগুন খেলে তা আস্তে আস্তে হজম হয় এবং বেশিক্ষণ পেটে থাকে, বিধায় ক্ষুধা হয় দেরিতে । পেট ভরা ভরা ভরা মনে হয় তাই খাবার গ্রহনও কম হয় । এভাবেই দেরিতে দেরিতে খাইলে আস্তে আস্তে দেহের অবাঞ্ছিত মেদ নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে।
★ ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে বেগুনের কার্যকারিতা -
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেগুনে বিদ্যমান পটাসিয়াম, খনিজ,ইলেকট্রোলাইট,রক্তের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করে, সাধারন ভারসাম্য রক্ষা করে রক্তে লবনের পরিমান নিয়ন্ত্রন করে , ফলে রক্তের চাপ স্বাভাবিক থাকে।
আরও পড়ুন -- ফুুল কপির উপকারিতা
★ ত্বকের সুরক্ষায়-
বেগুনের সক্রিয় উপাদান অ্যান্থোসায়ানিন ও নাসুনিন নামক শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি মস্তিস্কের ফ্রীরেডিকেল ও ক্ষতিকর অক্সাইড সমুহকে সহজেই সরিয়ে দেহকে তরতাজা করে তোলে এবং কোষ সমুহের পুষ্টি নিশ্চিত করে। ফলে ত্বকের মৃত কোষ সমুহ সহজেই ঝরে পড়ে এবং তরতাজা কোষের সৃষ্টি হতে থাকে। এতে করে ত্বকের বলিরেখা ,ভাঁজ পড়া, বয়সের ছাপ ও অযাচিত দাগ সমুহ সহজেই মিশিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পেতে থাকে।
বেগুনে বিদ্যমান ফটো নিউট্রিয়ান্ট সেল ও অ্যান্থো সায়ানিন নামের এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ মস্তিষ্কের সেল ও মেমব্রেনের উপর অতিরিক্ত চাপ, আঘাত ও নিউরোইনফ্লেশনকে প্রতিরোধ করে এবং হাজারো কার্যকরী ও উপকারী নিউরোসেলের ক্ষতি কমিয়ে স্মৃতিশক্তি সচল রাখে এবং বুদ্ধি বিকাশের প্রতিবন্ধকতা দুর করে। অ্যালামঝাইমার সমস্যাও প্রতিরোধে বেগুনের রয়েছে কার্যকরীী ভুমিকা।
★ বেগুন যখন হার্ট ভাল রাখে-
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে বেগুনে রয়েছে , প্রচুর পরিমান পটাসিয়াম, ভিটামিন বি ৬, ফ্লোরোনয়েড, অ্যান্থোসায়ানিন এবং ফ্লাভোনয়েড নামক সব শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমুহ।যেগুলো হৃদরোগ বাড়ায় বা হৃদরোগ সৃষ্টি করে এমন ফ্রী রেডিকেল সমুহকে দেহ থেকে সহজে সরিয়ে ফেলে হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কার্ডিও ভাস্কুলার সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে বেগুনের অনেক ভুমিকা।
বেগুনের শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন-সি এবং এবং"Cholesterol Dehydrated Elements" কোলেস্টেরল ঝরানো উপাদান সমুহ।
যাহা মানবদেহের রক্তে নিহিত উপকারী কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়িয়ে , ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (এলডিএল , টিজি) বংশ উজাড় করতে সক্ষম। ফলে রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় থাকে এবং হৃদপিন্ডের কলেবর ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে রক্তের স্বাভাবিক সরবরাহও বজায় থাকে।
★ মস্তিষ্কের হাড় চুলের গোড়া শক্ত করতে -
বেগুনে বিদ্যমান পানি ও উপকারী এন্টিজেন্ট সমুহ, স্কালের পুষ্টি পুরন করে, চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
বেগুনের নিরামিষ তরকারি ও ভর্তা সকল
প্রকার অসুস্থতায় পথ্য হিসেবে খাওয়ানো হয়।
★★ অপকারিতা -
বেগুন খেলে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। তাদেরকে বুঝে শুনে বেগুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো।
বেগুন যেন গুন নিয়ে আপনার শরীরে প্রবেশ করে এই কামনায়, আজ এ পর্যন্ত। দেখা হবে নতুন কোন পোস্টের সাথে। সাথেই থাকুন -
প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
স্বাগতম সবাইকে
ReplyDelete