সজিনার গাছ পুষ্টির ডিনামাইট।
কমলা লেবুর চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন-সি, গাজরের চেয়ে চার গুন বেশি ভিটামিন-এ,
কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি-পটাশিয়াম এবং
দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও
দুই গুণ বেশি -আমিষ।
সজিনার সব উপকারী উপাদান সমুহ, মানবদেহের ডিফেন্স ম্যাকানিজম গুলিকে সহজেই শক্তিশালি করে তুলতে পারে। এর ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ দেহের ইমিউনিটি অফ স্টিমুলেন্ট বাড়িয়ে তোলে এতে স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স ধরে রাখার উত্তম হার্ব এই সজিনা এবং যাহা এইডস রোগেও কার্যকরী।
সজিনা/সজনে
"সজিনা" মানব কল্যানে অসম্ভব উপকারী একটি "অলৌকিক" গাছ । .অত্যধিক "নিউট্রিশন" কারনে ইহাকে"সুপার ফুড"গাছ বলা হয়ে থাকে। কেহ কেহ "মিরাকেল" গাছও বলে থাকে।যে যেই নামেই ডাকুন তাতে সজিনা গাছের কোন যায় আসেনা। সজিনা যে উপকারী গাছ এট সবার জানা। সজিনা পছন্দ করে না এমন লোকের সংখ্যা নেহায়াতই কম।
সজিনা বা সজনে গাছ সব মহাদেশে কম-বেশি দেখা গেলেও গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে যেখানে পানি জমে থাকেনা, এমন স্থানই সজিনা গাছের একান্ত নিজের পছন্দ। এটি খরা সহিষ্ণু উদ্ভিদ। জমানো পানিকে ভয় করে সজনে গাছ।
সজনে গাছের ফল, ফুল, পাতা, কান্ড ও শিকড়ের ছাল বাকল সবই খাদ্য ও ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
সজিনা ডাটার সুস্বাদু তরকারি সবার কাছেই প্রিয়। পাতার পাউডার, ফ্লোরি, ভর্তা, চাটনি, চা ও হরেক রকম ভাবে খাওয়া যায়।
এমনি একটি অপ্রচলিত তরকারির নাম "প্যালকা"।
বাংলাদেশের রংপুর ও দিনাজপুর জেলায়, গৃহিণী পর্যায়ে উদ্ভাবিত এ খাবারটি "প্যালকা" নামে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। "প্যালকা" তরকারি তৈরী করা খুবই সহজ।
প্যালকা তৈরী করতে যা যা লাগবে -
* ২ কাপ কচি সজনে পাতা কুচি ।
* ১ চিমটি খাবার সোডা ।
* ৪ চামুচ ভোজ্য তেল।
* ১ টি রসুন কুচি।
* আধা চামুচ আদা কুচি।
* লবন স্বাদ মতো ও
* কাচা মরিচ কুচি স্বাদ মতো
প্যালকা তৈরির নিয়ম -
প্রথমে হাড়িতে দেড় থেকে দুই লিটার পানি, ভালভাবে গরম করে নিন , এবার গরম পানিতে উল্লেখিত উপাদান সমুহ দিয়া নাড়াচাড়া করতে থাকু।। ঝোল ঘন হয়ে আসলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন । এবার প্যালকার স্বাদ নিন।
খাদ্য ও পুষ্টি গবেষকদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে প্রতি ১০০ সজিনা পাতায় ৬৬ ও ফলে ৩৭ কিলক্যালরি শক্তি। যাহা খাদ্য মানে নিম্নরুপ -
উপাদান---------------পাতা-----------ফল
* কার্বোহাইড্রেট -------৮.২৯---------৮.৫১ গ্রাম
* প্রোটিন --------------- ৯.৪২---------২.১৬ গ্রাম
* ফাইবার -----------------২.৩---------৩.৫১ গ্রাম
* ফ্যাট --------------------১.৫২--------০.২৬ গ্রাম
* ভিটামিন-এ------------৩.৮২----------৪.১ মাগ্রা
* থায়ামিন-বি১--------০.২৬২-----০.০৫৬ মিগ্রা
* রিবোফ্লাভিন-বি২---০.৬৬৭-----০.০৮১ মিগ্রা
* নিয়াসিন-বি৩--------২.২৩২------০.৬৩২ মিগ্রা
* প্যান্টোথেনিক-বি-----০.১৩৩-----০.৮৮১ মিগ্রা
* ফলেট-বি৯--------------৪১.২----------৪৫.১ মাগ্রা
* ভিটামিন-সি----------- ৫১.৫-----------১৪.২ মিগ্রা
* ক্যালসিয়াম -----------১৮৯------------৩০.২ মিগ্রা
* ম্যাগনেসিয়াম -------------১৫৮--------৪৪৯ মিগ্রা
* ম্যাঙ্গানিজ-----------------০.৪০-----০.২৬৮ মিগ্রা
* ফসফরাস------------------১১৬-------৫০.২ মিগ্রা
* পটাসিয়াম -----------------৩৪২--------৪৬৫ মিগ্রা
* সোডিয়াম-------------------৯.৩-------৪২.১ মিগ্রা
* লৌহ------------------------ ৪১১---------৩৬২ মিগ্রা
* জিংক------------------------০.৮-------০.৫২ মিগ্রা
* পানি--------------------------৭৯--------৮৯ %
তাঁরা আরও বলেন যে, প্রতি ১চামুচ সজনে পাতার পাউডারেে-
ভিটামিন---------------------------------২৩ মিগ্রা
. লৌহ --------------------------------- ১৭১ মিগ্রা
. পটাসিয়াম----------------------------- ৭০ মিগ্রা
. ম্যাগনেসিয়াম------------------------- ৪২ মিগ্রা
. ক্যালসিয়াম -------------------------১২৭ মিগ্রা
. আমিষ --------------------------------- ৮২ মিগ্রা
.
যাহা অন্যান্য খাদ্য মানের সহিত তুলনা করিলে দেখা যায়, সজিনা ফল ও পাতায় রয়েছে,
* স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সজনে গাছ-
স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, 20% এর অধিক প্রোটিন সম্বলিত খাবার গুলোকে অ্যামাইনো এসিড হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। শুধু সজনের মধ্যেই 9 ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিডের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া গেছে। যেগুলো মানবদেহ সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। এসব উপাদান ভিটামিন ও খনিজের অভাব পুরন করে, রক্ত স্বল্পতা, অন্ধত্ব সহ ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ গুলি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে। সজনেডাঁটা ও পাতায় রয়েছে নব্বইটির(90) বেশি উপকারী উপাদান এবং ছেচল্লিশটির(46)বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো মানব ও পশু স্বাস্থ্য রক্ষায় হাজার হাজার বছর ধরে ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
* সজনে বীজের তেল বাত ব্যাথা কমায়-
* সজনে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করে -
সজনে পাতায় রয়েছে এন্টি-হাইড্রোফোবিয়া নামক দুষ্প্রাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা কুকুরে কামড়ানো রুগীকে বিশ মুক্ত করতে পারে।
সজনে পাতা রসের সহিত হলুদ, রসুন, গোলমরিচ ও লবন বেঁটে, কুকুরেে কামড়ানো রুগীকে খাওয়ালে বিষ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।
* সজনে পাতা বার্ধক্য ঠেকায়-
সজনেডাঁটা ও পাতায় রয়েছে, ছত্রিশটির বেশি এন্টিইনফ্লামেটরী উপাদান সমুহ, শরীর সচল রাখার মত পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। যাহা মানবদেহের প্রদাহ কমিয়ে মন, মানসিকতা সহ সকল অর্গান ও অঙ্গ সমুহের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এতে বার্ধক্যজনিত রোগ সমুহ ধারেই ঘেষতে পারেনা।
সজনে ও পাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ, অন্ত্রের সুরক্ষাকারি উপাদান সমুহ,এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেল সমুহ।যেগুলো পেটের সুরক্ষা দিতে খুবই কার্যকরী। এসব উপাদান অন্ত্রের স্বাভাবিক পর্যায় ঠিক রেখে হজমশক্তি বাড়ায় এবং বহুদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দুর করে।
* সজনেপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন ও রোগ সারায়-
সজিনা ও পাতায় রয়েছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন কারি অ্যাসেনশিয়াল সব উপাদান, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনকারী উপাদান সমুহ। এসব উপাদান প্যাংক্রিয়াসের শক্তি বৃদ্ধি করে ইনসুলিনের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তের সুগারাধিক্য স্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থান করে। প্রতেহ ১ চামুচ শুকনো সজনে পাতার পাউডার, আধা চামুচ মেথির গুড়ার সহিত মিশিয়ে, নিয়মিত খাইলে বহুমুত্র রোগ নিরাময় হয়।
* বাত ব্যাথা ও সায়েটিকায় -
সজনে পাতা ও ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্যাথা কমানোর মত উপাদান সমুহ। এসব সক্রিয় উপাদান সমুহ শরীরের বিষ, বাত, সায়েটিকা বাত এবং জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকর।
বীজের তেল ও ছালের রস মালিশ এবং পাতার গুড়ো খাইলে, ব্যাথায় তাৎক্ষণিক উপশম পাওয়া যায় ।
* সজনে হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা দেয়-
সজিনা ও পাতায় বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-সি, দুস্পাপ্য সব খনিজ, স্বল্প মাত্রার শর্করা, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য হৃদপিণ্ড বান্ধব উপাদান সমুহ, মানবদেহের রক্তনালি পরিস্কার করে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের গতি স্বাভাবিক করে।
নিয়মিত সজনে খাইলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে ।
* সজনে পাতা যৌবন ধরে রাখে-
সজিনার সব উপকারী উপাদান সমুহ, মানবদেহের ডিফেন্স ম্যাকানিজম গুলিকে সহজেই শক্তিশালি করে তুলতে পারে। এর ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ দেহের ইমিউনিটি অফ স্টিমুলেন্ট বাড়িয়ে তোলে এতে স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। বয়স ধরে রাখার উত্তম হার্ব এই সজিনা এবং যাহা এইডস রোগেও কার্যকরী।
* গর্ভবতির স্বাস্থ্য ও বুকের দুধ বাড়াতে-
সজনে ও পাতায় বিদ্যমান, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, গর্ভের ভ্রুনের বিকাশ, বাড়ন্ত শিশুদের শরীর গঠন ও মেধা বিকাশ এবং মায়েদের বুকের দুধ বাড়াতে খুবই কার্যকরী।
* ওজন কমাতে সজনে -
এর ভিটামিন, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওজন কমানোর উপাদান সমুহ মানবদেহের অবাঞ্ছিত ও অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
* কিডনি ও যকৃত সুরক্ষায় -
সজনের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমুহ কিডনি ও যকৃৎসহ আশপাশের অঙ্গ সমুহের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।
* রোগ প্রতিরোধে-
এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিবায়োটি,এন্টিটক্সিক উপাদান সমুহ, মানবদেহের ক্ষতিকর অক্সাইড সমুহ অপসারণ করে সহজেই শরির ডিটক্সিফাইড করতে পারে।সজনে ফল ও পাতা মানবদেহের ভারী ও ক্ষতিকর ধাতু অপসারণ করে । রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে অগ্রনি ভুমিকা পালন করে।
* সর্দি , কাশি ও মাথায়-
এ ছাড়াও সজনে পাতায় রয়েছে, সর্দি কাশি, হাত পায়ের জ্বালা পোড়া, মাইগ্রেইন, সিজেনাল জ্বর সারাতে অ্যাসেন্সিয়াল সব উপাাদান সমুুহ।
কচি সজিনা পাতা বা শুকনো পাতার গুড়ো চায়ের সাথে মিশিয়ে খাইলেও একই উপকার পাওয়া যাবে
আজ এই পর্যন্ত, আগামী লেখা পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, এই কামনায় ...
লেখা ও ছবি, ডাঃ এজেএম নজরুল ইসলাম
প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং কলামিস্ট।
Welcome to my activists
ReplyDelete