পানি ফল খাওয়া মাত্রই দেহে বল আনে।
পানিফল |
বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় বিল থেকে সংগৃহীত বুনো, ছোট ও তীক্ষ্ণ সুুঁচালো তিন কাঁটাযুক্ত সিংগড় সিদ্ধ করা অবস্থায় ফেরিওয়ালাদের বিক্রি করতে দেখা যায়। যেটির পানিফলের সাথে কোন মিল নাই।
ছবির নাম দেখেই হয়ত বুঝতে পেরেছেন, আমার উপস্থাপন বিষয় সম্পর্কে । আমি সব সময় নতুনকে নিজের মত করে সাজানোর চেস্টা করিতেছি এবং সবার আশির্বাদে এগিয়ে যাওয়ার চেস্টা করছি।
পানিফল/সিংগর
পানিফল এক ধরনের জলজ ও লতানো গাছের ফল।
এফল দেখতে অনেকট গরুর মাথার মত শিং যুক্ত হওয়ায়, অনেক স্থানে একে " সিংগর " নামে ডাকে।
আবার সিংগারার মতো দেখতে তিন কোনা বিশিষ্ট হওয়ার কারনে অনেকে "সিংগারা " নামে ডাকে।
ইংরেজি নাম "Water chestnut " । ফলের ভিতর সাদা রঙের ,মোলায়েম শাঁস থাকার কারনে হয়তবা ইংরেজিতে এই নামটিির প্রচলন হয়েছিল। কারণ পানিফল রৌদ্রে শুকাইলে, ভিতরের শাঁস টুকু বাদামের বিচির মতই খাইতে নরম ও মুচমুচে হয়ে হয়ে থাকে ।
যতদূর জানা যায় পানিফলের উৎপত্তি চিনদেশের পতিত জলাশয়, বিল, পুকুর, ডোবা ও নর্দমায়। এসব পতিত জলাশয় ভুমিত বুনো জলজ উদ্ভিদ হিসেবে প্রথমে পানিফল আবিস্কৃত হয়। সহজ প্রাপ্যতা সাপেক্ষে প্রথমে চিনদেশের গ্রামের বাসিন্দা গন এফল কাঁচা ও সিদ্ধ করে খাওয়া শুরু করেন। এক সময় তাঁরা রান্না করে এবং ফলের শাঁসের পাউডার দিয়া রুটি তৈরি করে খেতে থাকেন। বর্তমান সময়ে তাঁরাই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে পানিফল চাষ করা শুরু করেন এবং তাঁদের কাছে এখনো এটি উপাদেয় ও দামি খাবার হিসেবে বিবেচিত।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্য যেমন ওয়াশিংটন, নর্থ ক্যারোলাইনা ও ফ্লোরিডায় পানি ফলকে এখনো জলজ আগাছা হিসেবে গন্য করা হয়।
বর্তমান সময়ে , ইতালি, আফ্রিকা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, নেপাল , ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় পানিফল অল্পবিস্তর বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে।
🇧🇩বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, দেবহাটা ও নওগাঁ জেলায় পানিফলের বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। যাহা চাহিদার তুলনায় অনেক কম হইলেও রাজধানী ঢাকা সহ বড় বড় শহরে মোটামুটি সরবরাহ দেখা যাচ্ছে । তবে গ্রামাঞ্চলে পানি ফল এখনোও অনেকে চিনেন না,নামও জানেন না এবং তেমন ভাবে পাওয়াও যায়না।
বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় বিল থেকে সংগৃহীত বুনো, ছোট ও তীক্ষ্ণ সুুঁচালো তিন কাঁটাযুক্ত সিংগড় সিদ্ধ করা অবস্থায় ফেরিওয়ালাদের বিক্রি করতে দেখা যায়। যেটির পানিফলের সাথে কোন মিল নাই।
চিনারা এ ফলের শাঁসের পাউডার দিয়া রুটি তৈরি করে খায় এবং কাঁচা পুষ্ট ফলের তরকারি খায় । তাদের কাছে পানি ফলের তরকারি অতি প্রিয় ও উপাদেয় খাবার।
রসালো ও সুমিষ্ট এ ফলটি আজকাল ছোট বড় সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
ভেষজ বিশেষজ্ঞগন বলেন, পানি ফল, উদরাময় , পেটের ব্যাথা কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে ।
দুর্বল লোকেরা এ ফল সহজে হজম করতে পারে ও তাৎক্ষণিক বল ও শক্তি পায়। কারণ এ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও শর্করা।
এন্টিভাইরাস, এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিবডি উপাদান সমুহ পানিফলে বিদ্যমান রয়েছে।
খাদ্য ও পুষ্টিমান
প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য পানিফল রয়েছে ৭০কিলক্যালরি খাদ্য শক্তি।যাহা খাদ্য ও পুষ্টিমানে নিম্নরূপ -
* আমিষ -------------------------------------২.৫ গ্রাম
* খাদ্য আঁশ ---------------------------------২.৬ গ্রাম
* কার্বোহাইড্রেট -----------------------------১২ গ্রাম
* খনিজ লবন ----------------------------০.১১ গ্রাম
* চর্বি --------------------------------------- ০.০৭ গ্রাম
* ক্যালসিয়াম ---------- --------------------১২ মিগ্রা
* আয়রন ----------------------------------০.১০ মিগ্রা
* থায়ামিন-বি৬---------------------------০.২০ মিগ্রা
* রিবোফ্লাভিন -বি২---------------------০.৪৬ মিগ্রা
* ভিটামিন-সি ---------- ------------১৫ মিগ্রা এবং
* পানি --------------- ---------------------------৯০ %
খাদ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ গন বলেন, পানিফল রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও চিনি, যাহা খাইলে আপনার ক্ষুধা নিবারন করে ও তাৎক্ষণিক ভাবে দেহে শক্তি আনয়ন করে।
পানিফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খাদ্য আঁশ, খাদ্য শক্তি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, সামান্য পরিমান ভিটামিন এ ও বি, পটাসিয়াম, তামা এবং ম্যাঙ্গানিজ।
♥ এলার্জি ও শোথ কমাতে -
পানিফলের শুকনো শাঁসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অ্যালার্জি উপাদান, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, এন্টি হিস্টামিন উপাদান এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমুহ। এসব উপাদান এলার্জি আক্রমণের কবল থেকে মানবদেহকে মুক্ত রাখতে খুবই কার্যকরী। শরীরের অবাঞ্ছিত পানি ঝরিয়ে শোথরোগ বা ফোলা কমাতে পারে। এজন্য ফলের শাঁস শুকিয়ে বা আটা তৈরি করে রুটি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
উদরাময়, আমাশয়, তলপেটের ব্যাথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে, পানিফলে রয়েছে এ্যান্টোগনিস্ট উপাদান, প্রচুর পরিমানে আঁশ, মিনারেল সমুহ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি। এসব উপাদান বিপাকক্রিয়াকে তরান্বিত করতে খুবই কার্যকরী। ফলে মিউকাস মেমব্রেন শক্তিশালি হয়ে সহজেই পাতলা পায়খানা রোধ, অযাচিত গ্যাস তৈরি বন্ধ এবং জমানো কঠিন মল সহজেই নিরসন হতে পারে। এজন্য কাঁচা ফলের চেয়ে, শুকনো ফলের শাঁস বেশি কার্যকরী।
♥ বল ও পুষ্টি কারক হিসেবে-
পানিফলে বিদ্যমান বল বৃদ্ধি কারক উপাদান সমুহ, খাদ্যপ্রাণ, সর্করা, প্রোটিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ, খাওয়া মাত্রই মানবদেহে পুষ্টি যোগান দিয়া তাৎক্ষণিক বল বৃদ্ধি করতে পারে। অসুস্থ পরবর্তী সময়ে বল বাড়াতে পানি ফল খুবই কার্যকরী। এটি সহজ পাচ্য হিসেবে শিশু-কিশোর, যুবা-বৃদ্ধ সহ সবার খাবার তালিকায় রাখার মত উপযোগী।
♥ যকৃতের প্রদাহে -
পানিফলের যকৃত সুরক্ষাকারী উপাদান সমুহ,মিনারেল, আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমুহ, যকৃতের সুরক্ষায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এতে যকৃতের প্রদাহ কমিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং মেটাবলিজম বাড়িয়ে বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে পারে।
♥ যৌনশক্তি বর্ধক-
যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে পানিফলে রয়েছে, যৌনশক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান সমুহ, স্টিমুলেক্স, ভিটামিন সমুহ, মিনারেল, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। এসব উপাদান স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমিয়ে, শারীরিক ও মানষিক সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন চাহিদা ও শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
♥ সিজেনাল সমস্যা-
সিজেনাল সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে, পানিফলে রয়েছে, এন্টিহিস্টামিন, এন্টিভাইরাস ও এন্টিবায়োটিক উপাদান সমুহ। বিশেষকরে বর্ষা বিদায়ের সাথে শীতের আগমন কালের অনেক সমস্যা প্রতিরোধে পানিফল খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে।
♥ কিডনি ও প্রস্রাবের সমস্যায়-
পানিফলে বিদ্যমান, আঁশ, মিনারেল, পানি ও এন্টিঅক্সডেন্ট কিডনির সমস্যা দুর কর, প্রস্রাবের গতি বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকরি ভুমিকা পালন করে। এসব উপাদান প্রস্টেট এর ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
♥ রক্তশুন্যতায় পানিফল -
পানিফলের আয়রন, ভিটামিন, মিনারেল , এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং রক্ত পরিষ্কারক ও বৃদ্ধিকারক উপাদান সমুহ মানবদেহে লোহিত রক্ত কনিকা বাড়িয়ে তোলে এবং এতেই রক্তের রঙ লাল দেখায়। ফলে রক্ত শুন্যতা সমস্যা দুর হয় এবং বল বৃদ্ধি পায়।
♥ ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আদ্রতা বাড়াতে পানিফল-
প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি, খনিজ এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ত্বক উজ্জ্বলকারী উপাদান সমুহ,ত্বকের নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষ সমুহ ঝরিয়ে ফেলে নতুন কোষের সৃষ্টি করতে ভুমিকা রাখে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আদ্রতা বেড়ে চকচক করে।
♥ ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে -
পানিফলের উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি , মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণকারি উপাদান সমুহ মানবদেহের রক্তনালি পরিস্কার করে এবং রক্ত চলাচলের গতি স্বাভাবিক রাখতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে।
♥ রুচিবর্ধন ও বমিবমি ভাব কমাতে পানিফল-
এর রুচিবর্ধক উপাদান সমুহ , শক্তিশালি আঁশ, ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, খনিজ উপাদান সমুহ, মুখের রুচি বাড়াতে এবং অযাচিত বমিবমি ভাব কমাতে খুবই কার্যকর।
♥ শরীর টক্সিন মুক্ত করে শরীর ঠান্ডা রাখতে-
পানিফলের এন্টিটক্সিক উপাদান সমুহ, মিনারেল সমুহ, ভিটামিন সমুহ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ মানবদেহের অবাঞ্ছিত অক্সাইড সমুহ ও ক্ষতিকর টক্সিন সমূহকে দুরিভুত করে, সহজেই মানবদেহকে বিষযক্ত করে এবং শরীরের প্রদাহ কমিয়ে, শরীর রাখে চনমনে।
♥ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে-
পানিফলের এন্টি টউমার উপাদান সমুহ স্তন ও থ্রোট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
♥ নিষেধ-
প্রোটিন ও শর্করা আধিক্য হওয়ায় , ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এফল খেতে হবে।
পানিফল নিয়ে লেখা আজ এখানেই। আবার আসব নতুন কোন বিষয়ে পোষ্ট নিয়ে, সাথেই থাকুন।
ছবি ও লেখা, ডাঃ নজরুল ইসলাম।
প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
Welcome to all
ReplyDelete