রসুন হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের মহৌষধ।




 আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে এবং সচল রাখতে,রসুনে রয়েছে "Sexually stimulating material" বা যৌন উত্তেজক উপাদন সমুহ, "এন্টি অক্সিডেন্ট","ফসফরাস" "নিকোটিন" ও "ভিটামিন-সি"। যাহা মুহুর্তেই যৌন উত্তেজক হিসেবে  কাজ শুরু করে। নিয়ম মেনে খেয়ে পরখ করে দেখুন কি পরিবর্তন হচ্ছে আপনার যৌন জীবনে।

  প্রিয় দর্শক ও ব্লগার, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রলোক
সবাইকে জানাই লেখার সময়কালীন শুভেচ্ছা।

আমি জানিনা, বুঝতেও পারছিনা,তবে মনে হয়, লেখার কোন শুরু নাই শেষও নাই,  সময় নাই অসময়ও নাই, কেউ লেখা পড়ে কেউ পড়েনা,খুজে পাইনা এর কোন বিরাম ও যতিচিহ্নও। আজকে আমার এমনই এক লেখার  বিষয়, যা সর্বজন পরিচিত ও সর্বাধিক ব্যাবহারের রান্নার মশলা ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক ভেষজগুণ সম্পন্ন" রসুন " সম্পর্কিত ।
              
    রসুন বিশ্ব মানব জাতির কাছে বহুল গুন সম্পন্ন একটি মশলা এবং প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত  ।  ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, রসুনকে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক ও গরিবের পেনিসিলিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । চীনদেশীয় গবেষনায় রসুন'কে "ঐন্দ্রজালিক" শক্তি সম্পন্ন উদ্ভিদ বলা হয়েছে এবং প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ও ঔষধিতে ভরপুর রসুনে রয়েছে অগনিত রোগ সারানোর সব যাদুকরি ক্ষমতা। চিনা এক গবেষনায় তাঁরা আরো প্রমান করেছে যে, শুধুমাত্র রসুন ও মধুর উপর ভিত্তি করে, অনেক জটিল রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। রসুনকে পিয়াজের জাত ভাই উল্লেখ করে চিনারা বলেন, এটি শুধু মসলা হিসেবে খাদ্যের স্বাদ বাড়াতেই নয়, এতে রয়েছে অনেক রোগ সারানোর যাদুকরী ক্ষমতা। তাঁরা আরও বলেন রসুনে রয়েছে "প্রদাহবিরোধী উপাদান","এন্টি ফাংগাল","এন্টি হিস্টামিন", "এন্টি বায়োটিক", "অনেক ধরনের অমুল্য পুষ্টি" এবং "উচ্চ মাত্রার ভিটামিন" ও "খনিজ"।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাচা রসুনের মধ্যে পুরো ১০০ গ্রাম কিলোক্যালরি শক্তি খুজে পাওয়া যায়। চাইনিজ গবেষকদের গবেষনা মতে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপদানগুলো নিম্নরূপ :-

* ভিটামিন- বি৬--------------------------- ৯৬ %

* ভিটামিন- সি---------------------------- ৪০ %

* লৌহ ------------------------------------- ১৫ %-

* ক্যালসিয়াম---------------------------- ২০%

* ম্যাজ্ঞানিজ----------------------------- ৮০%

* ফসফরাস ----------------------  ২৫% এবং

* মানবদেহের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় উপাদান সমুহ।

রসুন প্রধানত খাদ্যে মশলা হিসেবে ও চিকিৎসায় ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়াও জ্যম,জেলি,জুস,আচার, সালাদ, চাটনি সহ হরেক রকম বাহারি খাবার তৈরি ও ওষুধে ব্যাবহার করা হয়।

আজকাল সকল ধরনের পেটেন্ট ওষুধ তৈরিতে রসুনের ব্যবহার লক্ষণীয়।

রসুনের সামান্য কিছু গুণাগুণ নিম্নরুপ:- 

    
যৌনশক্তি বাড়াতে রসুন  :-

আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে এবং সচল রাখতে,রসুনে রয়েছে "Sexually stimulating material" বা যৌন উত্তেজক উপাদন সমুহ, "এন্টি অক্সিডেন্ট","ফসফরাস" "নিকোটিন" ও "ভিটামিন-সি"। যাহা মুহুর্তেই যৌন উত্তেজক হিসেবে  কাজ শুরু করে। নিয়ম মেনে খেয়ে পরখ করে দেখুন কি পরিবর্তন হচ্ছে আপনার যৌন জীবনে।
  
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রসুন:-

 রসুন শক্তিশালী প্রাকৃতিক "অ্যান্টিবায়োটিক", "এন্টিহিস্টামিন", "এন্টিসেপটিক", "এন্টিবায়োটিক" ও "এন্টিফাঙ্গাল"। রসুনে রয়েছে পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজ  যেগুলো  মানুষের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই দরকারি।
   
হাই ব্লাড প্রেশার (হাইপার টেনশন) নিয়ন্ত্রণে :-

  উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রসুনে রয়েছে শক্তিশালি সব  উপাদান সমুহ। এতে রয়েছে, Hypertension control factors, উচ্চমাত্রার "পটাসিয়াম", "ভিটামিন-সি" ও "এন্টিঅক্সিডেন্ট" সমুহ। যাহা রক্ত নালিতে জমানো চর্বি ও দোষক্রটি সমুহ সরিয়ে, রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে ভুমিকা রাখে। ফলে হৃদপিন্ডের  রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসে।  হার্টএ্যাটাক, হৃদরোগ ও কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা  প্রতিরোধে রসুনের রয়েছে কার্যকরি ভুমিকা। 
 
টক্সিন মুক্ত করতে রসুন:-

  রসুনের  কার্যকরি এজেন্ট সমুহ, মানবদেহের ক্ষতিকর  "অক্সাইড" সমুহ সহজেই দুরিভুত করে। নিয়মিত রসুন খাইলে মানবদেহ থাকে টক্সিন মুক্ত। রক্ত ডিটক্সিফাইড করতে রসুনে রয়েছে বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ।
   
♥ কোলেস্টেরল কমাতে রসুন :-

রসুনে বিদ্যমান,এন্টিকোলেস্টেরল ফ্যাক্টর সমুহ, "ভিটামিন-সি,,"এন্টিঅক্সিডেন্ট" "পটাসিয়াম"ও অন্যান্য উপকারি এজেন্ট সমুহ, রক্তেের উপকারী কোলেস্টেরল (এইচডিএল) ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে আনতে খুবই কার্যকরি। এতে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল ব্যাবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া এড়াতে রসুন:-

রসুনে বিদ্যমান এ্যাসেন্সিয়াল উপাদান, "ভিটামিন-সি","এন্টিব্যাকটেরিয়াল","এন্টিভাইরাস","এন্টিফাঙ্গাল"ও "এন্টিএলার্জিক" উপাদান সমুহ রোগ সারাতে কোন সময়-অসময় মানেনা। যেকোন সময়ের ভাইরাস ও ব্যাকটিয়ার সংক্রমণ জনিত অসুখ যেমন জ্বর, সর্দি, ব্রন্কাইটিস, হাপানি, হুপিংকাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ  করতে এবং সারিয়ে তুলতে সর্বদায় সক্ষম।
     
কোষ্ঠকাঠিন্য ও ক্ষুধামন্দ্যায় রসুন:-
 
ক্ষুদামন্দা দুর করতে, যকৃৎ ও মুত্রাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি ফিরে আনতে রসুনে রয়েছে শক্তিশালী "ডায়াটারি ফাইবার", "ট্যানিল", ভিটামিন-সি ও আরও কিছু লুকানো উপাদান। যেগুলো অন্ত্রে প্রবেশ করে,"গ্যাস্ট্রিক জুস"র সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং"মিউকাস মেমব্রেন"কে শক্তিশালী করে তোলে। এতে হজমশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে, মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে এবং শরিরের চাহিদামত খাদ্য গ্রহন করা যায়। ফলে মলাশয়ের কঠিন মল নরম হয়ে আস্তে আস্তে নিরসন হতে থাকে এবং এক সময় তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

♥ শিশুদের সর্দি-কাশি,জ্বর ও ব্রংকাইটিসে :-

দুই-তিনটি রসুনের কোয়া থেতো করে, শরিষার তেলে গরম করতঃ ঠান্তা হলে বুকে,পিঠে ও গলায় আলতো ভাবে মালিশ করুন। কয়েকবার ব্যাবহারে দেখবেন জ্বর সর্দি ব্রংকাইটিস সবই পালিয়েছে।

মেদ ও ওজন কমাতে রসুন:-

রসুনে বিদ্যমান "Body thinning material" বা মেদ ঝরানো উপাদান সমুহ যেমন "ডায়াটারি ফাইবার","ভিটামিন-সি", "পটাসিয়াম",মানবদেহের অযাতিত মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতে অত্যান্ত কার্যকরি ভুমিকা রাখতে পারে। এজন্য অবশ্যই নিয়ম মেনে ও সময় ধরে খেতে হবে।

দাত ও হাড়ের সুরক্ষায় :-
 
রসুনের Anti-inflammatory component group বা এন্টি প্রদাহ উপাদান সমুহ, প্রচুর পরিমানে "সার্ভিস ক্যালসিয়াম" ও "ভিটামিন-সি" ও অন্যান্য কার্যকরি উপাদান সমুহ দাত, হাড় ও জোড়ার ব্যাথায় খুবই কার্যকরি। যাহা হাড় ও দাতের ক্ষয় রোধ করে এবং সায়েটিকা ও বাত ব্যাথায়ও খুবই কার্যকর।
    প্রচন্ড  দাঁতের ব্যাথায় এক কোষ রসুন থেতলে দাতে ধরে রাখলে নিমেষেই ব্যাথা কমে যাবে ।

@ রসূনের ক্ষতিকর দিক:-

   মনে রাখতে হবে, যাহারা  এলার্জি  ও পেটের সমস্যায় ভোগেন এবং যারা প্রেগন্যান্ট তাদেরকে বুঝে শুনে রশুন খেতে হবে, তানাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

** রসুন কিভাবে খাবেন :-

* রসুন সবসময় কাঁচা ও টাটকা অবস্থায় খেতে হবে।
 
কেননা আগুনের তাপে রসুনের মুল ও কার্যকরি উপাদান এ্যালিসিন (Allicin) সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।

* তিন-চারটি রসুনের কোয়া টুকরা টুকরা করে কেটে বা থেতো করে, রাতে দুই-তিন চা চামুচ মধুতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খালি পেটে খেতে হবে দিনে একবার।  বেশি প্রয়োজনে দিনে দুইবার।

* সকালে তিন-চারটি রসুনের কোয়া নাস্তার আগে ক্যাপসুলের মত খেয়ে নিতে হবে।

* চার-পাঁচটি কোয়া ভাতের সাথে পিয়াজের মত চিবিয়ে বা টুকরা করে লবন ও মরিচ দিয়ে চাটনি করেও খাওয়া যাবে।

* বেলেন্ডার করে ফ্রিজে রেখেও পরিমান মত খালি পেটেও খাওয়া যাবে।  

  আজ এখানেই, দেখা হবে আগামীতে সাথেই থাকুন।

ফটো ও আর্টিকেল : ডাঃ এজেএম নজরুল ইসলাম

অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

Comments

  1. লেখাটি ভাল লাগলে কমেন্ট করুন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।