তেঁতুল খান তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস কমান।



তেঁতুলের সহিত মানুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে , তেতুল দেখা মাত্র, নারী পুরুষ, যুবা বুড়া, খোকা,খুকু সবার জিহ্বায় জল আসে। এমন কি তেঁতুলের নাম মনে হলেই কারো কারো জিভে  জল আসে।

তেতুল/তিন্তিড়ি

তেঁতুল সারা বিশ্বে উচ্চমানের টক ফল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ।শুধু খাদ্য হিসেবে নহে, ঔষধি গুনই হচ্ছে তেঁতুলের মূল কথা। তেঁতুলের সস ও আচার  আজ বিশ্বজুড়ে সবার কাছে সমানভাবে সমাদৃত। সকল ঔষধ শিল্প যথা, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি ও ইউনানি সকল ধরনের ঔষধ তৈরিতে তেঁতুল আজ সমানভাবে ব্যাবহার হয়ে আসছে। 

তেঁতুল নিয়ে আমাদের রয়েছে অন্তহীন ভুল ধারনা -

কেউ বলে , তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়,  কেউ বলে পুরুষ লোক তেঁতুল খেলে বীর্য পাতলা হয় ও যৌন শক্তি কমিয়ে যায়। কেউ বলে গর্ভবতী মায়েদের তেঁতুল খাওয়ানো ঠিক না তাতে গর্ভের ভ্রুণ নস্ট হয়ে যেতে পারে, কেউ বলে তেতুল গাছে ভুত থাকে, আরও কত কি। যে যাই বলুক না কেন , আসলে  এত মন্তব্যের মধ্যেও তেঁতুল কিন্তু মানব জীবনে মহৌষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

  তেঁতুলে রয়েছে  প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্ট , টার্টারিক এসিড, এন্টি হিস্টামিন , এন্টি ভাইরাস , এন্টি টক্সিন ও এন্টি স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এজেন্ট সমুহ।

সব ধরনের ক্যালসিয়াম সম্বৃদ্ধ ফলের চেয়ে তেঁতুলে রয়েছে ১০ গুন বেশি ক্যালসিয়াম।   

  তেঁতুল  আচার, সস, জুস, চাটনি, ঔষধ সরবত ও তরকারির স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার হয়ে থাকে।

  
   পৃথিবীর সকল ধরনের ঔষধ যথা,  অ্যালোপ্যাথি , হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদি, কবিরাজি ইত্যাদি তৈরিতে কাঁচা ও পাকা তেঁতুল, তেঁতুলের বিচি, কান্ড ও মুলের ছাল বাকল ইত্যাদি সবই কাঁচা মাল হিসেবে ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার  হইতেছে।

তেঁতুলের সহিত মানুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে , তেতুল দেখা মাত্র, নারী পুরুষ, যুবা বুড়া, খোকা,খুকু সবার জিহ্বায় জল আসে। এমন কি তেঁতুলের নাম মনে হলেই কারো কারো জিভে  জল আসে ।

  তারপরও তেঁতুল নিয়া মানুষের কৌতুহলের শেষ নাই।

  তাই আসুন, তেঁতুলের ভাল মন্দ সম্পর্কে আমরা সঠিক ভাবে জেনে নেই।

প্রতি 100 গ্রাম ভক্ষণযোগ্য তেঁতুল ফলে রয়েছে 240 কিলক্যালরি খাদ্যশক্তি। যাহা খাদ্য ও পুষ্টি মান বিশ্লেষণে নিম্নরুপ-

* শর্করা -------------------------------------৬৪ গ্রাম

* প্রোটিন -------------------------------------৩ গ্রাম

* ফাইবার---------------------------------৫.৩ গ্রাম

* চর্বি---------------- ----------------------০.৫ গ্রাম

* মিনারেল--------------------------------৩.১ গ্রাম

* ভিটামিন-বি--------------------------০.৩৬ মিগ্রা

* ভিটামিন-ই -----------------------------০.১ মিগ্রা

* ক্যালসিয়াম------------------------------৭৫ মিগ্রা

* পটাসিয়াম----------------------------- ০৬০ মিগ্রা

* সোডিয়াম---------------------------------৩০ মিগ্রা

* ম্যাগনেসিয়াম----- ---------------------- ৯০ মিগ্রা

* সেলেনিয়াম------------------------------১.৬ মিগ্রা

* বেটা-ক্যারোটিন----------------------- -৬৬ মিগ্রা

* তামা ------------------------------------০.৮৬ মিগ্রা

* দস্তা -------------------------------------- ১.৩ মিগ্রা           

তেঁতুলের উপকারিতা  


★হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় তেঁতুল -

তেঁতুল ফলে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি, মিনারেল, দুস্পাপ্য সব এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং হৃদবান্ধব সব উপাদান সমুহ, মানবদেহের হৃদপিণ্ড সবল ও সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে। এসব সক্রিয় উপাদান করোনারির আর্টারি সমূহকে সবল রেখে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলের গতি স্বাভাবিক রাখতে পারে। ফলে হার্ট অ্যাটাক সমস্যা এবং কার্ডিও ভাস্কুলার সমস্যা থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
তেঁতুল 


★ ঠান্ডাজ্বর ও ঘুসঘুসে জ্বর কমাতে তেঁতুল 

তেতুলে বিদ্যমান সর্ব সময়ের অত্যাধুনিক এন্টিহিস্টমিন , এন্টি এলার্জিক, এন্টি কোল্ড স্টেরয়েড,মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ, সিজেনাল ঠান্ডা লাগা ও জ্বর হওয়া সমস্যা, সর্দিকাশি,  ঘুসঘুসে জ্বর, ম্যালেরিয়া সহ অন্যান্য মৌশুমী জ্বর প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী।       

★ তাৎক্ষণিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে -

পাকা ও কাঁচা তেঁতুলে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং রক্তনালি পরিস্কার রাখার মত সক্রিয় উপাদান সমুহ। যাহা খেলে উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষণিক কমে স্বাভাবিক হয়ে আসে।               
 গ্রামের বয়স্ক লোকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকেন যে, তেতুল রক্ত পানি করে,  তাঁদের কথাও আংশিক  ঠিক আছে, তাঁরাতো কোলেস্টেরল বুঝে না । না বুঝলেই বা কি হবে ? আবার তাঁদেরই সামনে যদি কোন মানুষের রক্তচাপ বেশি হতে দেখেন কিংবা হার্টের সমস্যা দেখতেে পায়,  তাহলে তাঁরাই প্রথম তেঁতুলের টক বা আচার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সাথে সাথেই উপকারও পেয়ে থাকেন।  প্রতিদিন ২ চামুচ পরিমাণ কাঁচা বা পাকা তেঁতুল খাইলে উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার করা সম্ভব ।
    

★ বাত ব্যাথা, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় -

তেঁতুলে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং হাড় ক্ষয় রোধক উপাদান সমুহ, শরীরের অবাঞ্ছিত অক্সাইড সমুহ সহজেই দুর করে, বাতের ব্যাথা কমাতে, হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে। 
 
★ কোলেস্টেরল ঝরিয়ে ফেলতে তেঁতুল -

খাদ্য ও পুষ্টিবিদরা বলেন, তেঁতুলের, ভিটামিন-সি, মিনারেল এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং মন্দ কোলেস্টেরল ঝরানোর অ্যাসেনশিয়াল উপাদান সমুহ , মানবদেহের রক্তনালি থেকে, রক্তে নিহিত ক্ষতিকর কোলেস্টরেল(এলডিএল) দ্রুততার সাথে সরিয়ে দিয়ে, উপকারি কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বসতি স্থাপন করিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে সক্ষম। তেঁতুল জেনোবায়োটিক বিপাক ক্রিয়ার সাথে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।  প্রতিদিন ২ চামুচ পরিমাণ কাঁচা বা পাকা তেঁতুল খাইলে স্থায়ী ভাবে কোলেস্টেরল সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক বিশ্বেও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধে ব্যাপকভাবে তেঁতুলের ব্যবহার দেখা যাইতেছে।  
  
★ পেটের পীড়ায় তেঁতুল -

ঔষধি গুনে ভরপুর টক এ ফলটি তে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টার্টারিক এসিড , যাহা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, পেটের বায়ু মুহুর্তেই নিরসন করে ।  অজীর্ণ , বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যাথা সারাতে, কৃমির উৎপাত ও পাইলস এর চিকিৎসায়, পুরাতন তেতুল আচারের সরবত  মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সফলতার সাথে ব্যবহার করে আসছে।
  
ডায়াবেটিস তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে তেঁতুল -

তেঁতুলে বিদ্যমান ভিটামিন-সি, ডায়াবেটিসে কার্যকরী মিনারেল সমুহ, এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ এবং অম্ল ও এন্টি সুগার এজেন্ট সমুহ, নিমিষেই রক্তে নিহিত অতিিরিক্ত ও ক্ষতিকর  চিনি গলিয়ে পানি করে দিতে সক্ষম। একারনে উচ্চ মাত্রার ডায়াবেটিস বৃদ্ধিতে, তেঁতুল খেলে তা তাৎক্ষণিক ভাবে আরোগ্যদায়ক। তবে পরিমিত পরিমাণ খেতে হবে, তা নাহলে গ্লুকোজ কমিয়ে " হাইপো " হতে পারে, হাইপো বিষয়টি মাথায় না রাখলে মুহুর্তেই হিতে বিপরীত হতে পারে। 

★ গর্ভবতী মায়ের লোভনীয় তেঁতুল -

তেঁতুল গর্ভবতী মায়েদের কাছে লোভনীয় খাবার, যাহা গর্ভ কালিন সময়ের বমি বমি ভাব,  খাবারে অরুচি , মাথা ঘুরা ভাব কমিয়ে আনতে কার্যকরী।


   


★ ওজন কমাতে তেঁতুল -

প্রতেহ হালকা নাস্তার পর, ১ চামুচ তেঁতুল ও ১ চামুচ জিরা গুড়ো, ১ কাপ জলে ভালভাবে মিশিয়ে খাওয়া শুরু করলে অল্প সময়ে আপনার ওজন কাংখিত ভাবে কমতে শুরু করবে। কাংখিত ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত এ প্রকৃয়া চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি যেমন ধীর গতিতে হয়ে থাকে তেমনি ওজন কমানোর বিষয়টি আরও বেশি ধীর গতিতে হয়ে থাকে। তাড়াহুড়ো করে কোন পদ্ধতিতে ওজন কমাতে কাংখিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নহে।

★ যৌন শক্তি বাড়াতে তেঁতুলের বিচি-

তেঁতুলের বিচিতে রয়েছে, আল্ট্রা হাই পারফর্মেন্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফী( UHPLC) বিশ্লেষণে প্রাপ্ত "ক্যাটচিন", " প্রোকানিডিন" "বি-১২",ক্যাফিক ও ফেরুলিক এসিড সহ আরও কয়েক ধরনের সেক্স হরমোন বৃদ্ধিকারক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী দুস্পাপ্য সব উপাদান সমুহ। এসব উপাদানে স্টিমুলেক্স ক্ষমতা থাকার কারনে সেক্স হরমোন গুলো সহজেই উদ্দীপিত হতে পারে এবং বীর্য গাড় হতে থাকে  । এজন্য বীজের শাঁস বিশেষ উপায়ে পাউডার করে খেতে হবে ।                                                          
★ এ ছাড়াও তেঁতুলের এন্টিএজেন্ট সমুহ-

এ ছাড়াও তেঁতুলের এন্টিএজেন্ট সমুহ শিশুদের পেটের পীড়া, মুখের ঘা, ত্বকের প্রদাহ, হাত পা জ্বালা, বাত ব্যাথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।

তেঁতুল 


  ছবি ও লেখা , ডাঃ এজেএম নজরুল ইসলাম।

প্রাক্তন শিক্ষক , অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

      

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।