পেয়ারা ডায়াবেটিস তাড়ায়।
পেয়ারা |
পেয়ারা সবার পছন্দের একটি ফল। এ ফল পছন্দ এমন লোক পাওয়া যায়না। দেশি, সহজলভ্য,মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর কদর বৃদ্ধ, যুবা পুরুষ মহিলা সবার কাছে । খাদ্যগুণ বিবেচনায় দেখা যায়, একটি পেয়ারায় রয়েছে, পাঁচ গুন বেশি ভিটামিন-সি, একটি কমলা লেবুর চেয়ে আর ভিটমিন-এ, দশগুণ বেশি একটি লেবুর চেয়ে। পেয়ারা ভেষজগুন এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল।
সম্মানিত দর্শক ভাই ও বোনেরা
সবাই ভাল আছেন এই কামনায় আজকের লেখালেখি শুরু করলাম। আজকের লেখার বিষয়, সবার সুপরিচিত এবং ছোট বড় সবার প্রিয় ফল,"পেয়ারা 'সম্পর্কে।
এটি "বেরি" জাতের ফলগুলির মধ্যে একটি অন্যতম। দেশি এফলটি কষযুক্ত, মিষ্টি স্বাদের ও খেতে সুস্বাদু বলে সকল বয়সী নারী ও পুরুষের কাছে সমাদৃত। এক সময়ের সিজেনাল ফল হলেও ভারত ও বাংলাদেশে বারো মাষেই এফল পাওয়া যায় এবং পৃথিবীর সব মহাদেশে প্রায় বারো মাসেই কম-বেশি হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। যতদুর জানা যায়, পেয়ারার আদি আবাস ভুমি বলতে দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো কে বুঝায়। পেয়ারার আছে নিজস্ব স্বাদ, গন্ধ, গঠন শৈলী ও ভেষজ উপকারিতা। এজন্যই গ্রাম্য ফলটি খুব তাড়াতাড়ি সারা বিশ্বে তার বিস্তৃতি ছড়ায়। যতদুর জানা যায়, বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারার চাষ করা হচ্ছে।
পেয়ারা সালাদ,জুস,কাচা-পাকা ও চিবিয়ে খাওয়া হয়। এর পাতা, বাকল ও শিকড়ে রয়েছে, আলাদা আলাদা ভেষজগুণ। বর্তমান সময়ে ঔষধ শিল্পেও সামান্য হলেও পেয়ারার ব্যাবহার হতে দেখা যাচ্ছে । চিনদেশে ওষুধ তৈরিতে পেয়ারার ব্যাপক ব্যাবহার হয় বলে সে দেশের হেলথ জার্নাল থেকে জানা যায়। আমাদের দেশে, কি ফুটপাতের দোকান আর কিবা সুপারশপ, অলিগলি সব জায়গায় পেয়ারা বেচা-কেনা হতে দেখা যায়। বিশ্বে অনেক জাত ও আকারের পেয়ারা দেখা যায়,ছোট,বড়,সাদা,কালো,গোল লম্বা ও আরও কত রকমের। তবে যাই হোকনা কেন, যেসব ফল দেখতে লাল রঙের বা ভিতরেও লাল, সেসব পেয়ারায় লাইকোপেন ও এন্টি অক্সিডেন্ড এর পরিমান বেশি।
পেয়ারা সবার পছন্দের একটি ফল। এ ফল পছন্দ করেনা এমন লোক পাওয়া যায়না। দেশি, সহজলভ্য,মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর কদর বৃদ্ধ, যুবা পুরুষ মহিলা সবার কাছে । খাদ্যগুণ বিবেচনায় দেখা যায় একটি পেয়ারায় রয়েছে পাঁচ গুন বেশি ভিটামিন-সি,একটি কমলা লেবুর চেয়ে,আর ভিটামিন-এ, দশ গুন বেশি একটি লেবুর চেয়ে। পেয়ারা ভেষজগুণ এবং পুষ্টি গুনে ভরপুর একটি ফল,
প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষন যোগ্য পেয়ারার খাাদ্য ও পুুুুষ্টিমাান নিম্নরুপ:-
* খাদ্যশক্তি -------------------৭০-কিলোক্যালরি
* প্রোটিন --------------------------------১০.১-গ্রাম
* খাদ্য আঁশ-------------------------------৫.২-গ্রাম
* ফ্যাট---------------------------------------১.১-গ্রাম
* কার্বোহাইড্রেট ----------------------------১৫-গ্রাম
* সোডিয়াম --------------------------------২.২-মিগ্রা
* পটাসিয়াম -------------------------------৪২০-মিগ্রা
* ক্যালসিয়াম--------------------------------১.১ মিগ্রা
* ভিটমিন-এ ----------------------------------১৩ মিগ্রা
* ভিটামিন-বি৬----------------------------------৬ মিগ্রা
* ভিটামিন-সি -------------------------------৩৮১ মিগ্রা
* আয়রন-------------- ------------------------১.১ মিগ্রা
* ম্যাগ্নেসিয়াম---------- -----------------------৬.১ মিগ্রা
* পানি- --------------------------------------৯০ মিগ্রা ও
আসুন জেনে নেই, পেয়ারা খেলে মানব দেহে কি কি উপকার করবে এবং খাদ্য ও পুষ্টি বিদগন কি বলেন :-
* পেয়ারা যখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে:-
* পেয়ারা যখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে:-
পেয়ারা অধিক "আশ"যুক্ত ও প্রচুর "ভিটামিন-সি" সম্বৃদ্ধ একটি সহজলভ্য ফল। এর দুষ্প্রাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ বিপাক ক্রিয়ার কার্যক্রম সহজ করে। ফলে অন্ত্রের ডাইজেস্টিভ কার্যক্রমও বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অন্ত্রেরওএবং "ইনসুলিন হরমোন" উৎপাদন কারী অর্গান "প্যাংক্রিয়াস" এর। আর "প্যাংক্রিয়াস" স্বাভাবিক হলে, স্বাভাবিক ভাবেই সরবরাহ বেড়ে যায় "ইনসুলিন" হরমোনের। ফলে ডায়াবেটিস মেলিটাস বা টাইপ -২ এর ঝুঁকি বহুলাংশে কমে এবং রক্তে নিহিত সর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিদদের মতে , প্রতিদিন একটি পেয়ারা খাইলে রক্তে সুগার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে, ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় থাকে। পেয়ারার কচি পাতার চা খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে বলে, চিনা এক গবেষনা পত্রে জানা যায়।
পেয়ারায় বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি ও ভিটমিন-ডি। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন একটি করে মাঝারি আকৃতির "পেয়ারা" চিবাইয়া বা জুস করে খেলে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়, "সর্ট সাইট ও লং সার্ইট" সমস্যা প্রতিরোধ হয় এবং সিজেনাল চোখ উঠা রোগ প্রতিরোধ করে । নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পেয়ারা থাকলে চোখের কর্নিয়া সুস্থ থাকে ও রাতকানা রোগও প্রতিরোধ হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখুন ও পরিবারের সবার চোখ ভাল রাখুন।
পেয়ারায় বিদ্যমান প্রচুর পরিমানের "খাদ্য আশ", পেটের স্বাভাবিক সুরক্ষায় সহজ ভুমিকা পালন করে। ডায়রিয়া বলেন আর পাতলা পায়খানা বলেন, গ্রাম-গন্জে এসব রোগে প্রথমেই পেয়ারার কথা উঠে আসে। জুস বা পেয়ারা চিবিয়ে খান দেখবেন এর মন্ত্রের মত পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছে। সবুজ রঙের পেয়ারা, সাদা পেয়ারার চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর যে পেয়ারার ভিতরে লাল , তাতে "ক্যারোটিনও" অনেক বেশী । ভাল থাকুন।
পেয়ারার দুষ্প্রাপ্য "এন্টিঅক্সিডেন্ট" সমুহ যেমন, ডায়াটারি ফাইবার, পটাসিয়াম ও ভিটামিন-সি সমুহ, রক্তে নিহিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল)এর সহিত লড়াই করে এর মুলোৎপাটন করে এবং উপকারি কোলেস্টেরল(এইচডিএল)এর বসতি স্থাপন করায়। ফলে মানবদেহ থাকে, সুস্থ, ঝরঝরা ও ক্লান্তিহীন।
♥ পেয়ারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :-
পেয়ারায় রয়েছে উচ্চ মাত্রার লাইকোপেন, কেয়ারসেটিন ও ভিটামিন-সি নামে নামের শক্তিশালী উপাদান। এসব উচ্চমানের "এন্টিঅক্সিডেন্ট" সমুহ মানবদেহের ক্ষতিকর "অক্সাইড "গুলোর বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক যুদ্ধ কর। বিশেষ ধরনের এসব ক্যান্সার বিরোধী উপাদান , স্কিন, প্রস্টেট ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক ভুমিকা পালন করে। সবাই মিলে পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাল থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
♥ দেহকোষ রোগমুক্ত রাখতে পেয়ারা :-
পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন- সি, এন্টি টক্সিক ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এসব শক্তিশালী উপাদান সহজে মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে ক্ষতিকর "টক্সিন" সমুহ ধংশ করতে পারে । এর ফলে দেহের ক্ষতিকর টক্সিন সহজেই মুক্ত হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা থাকলে দেহাভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সহজে দুরিভুত হয় এবং রোগ মুক্ত দেহ গঠনে ভুমিকা পালন করে।
♥ হৃদপিন্ডের সুরক্ষা ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে :-
উচ্চমানের পটাসিয়াম,লাইকোপেন ও ভিটামিন-সি নামের খনিজ পদার্থ সমুহ যতেষ্ট পরিমানে পেয়ারায় বিদ্যমান । এসব মানবদেহের রক্তে সরাসরি প্রবেশ করে এবং রক্ত প্রবাহের বাধা সমুহ দুর করতে পারে। এতে হৃদপিন্ডের রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং রক্ত চাপও স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় পেয়ারা একটি বাছাই করা ফল। সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচ দিন এ ফল খেলে উভয় ধরনের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। ভাল থাকুন।
♥ উজ্জ্বল ত্বকের জন্য পেয়ারা :-
পেয়ারায় রয়েছে শক্তিশালী এন্টি-এজিংউপাদান,ভিটামিন-সিও এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো ত্বকের সুরক্ষা দিতে ন্যাচারাল ক্রিম ও টোনাল জেল হিসেবে কাজ করে থাকে। যাহা বহির্ত্বকের মৃত (ডেড) কোষ গুলি ঝরিয়ে, নতুন নতুন কোষ স্থাপন করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। পেয়ারার এন্টিএজিং উপাদান গুলো সহজেই মুখমন্ডলের বলিরেখা, ত্বকের কুচকে যাওয়া ভাব দুর করতে পারে এবং বয়সকে বহুলাংশে লুকিয়ে ফেলে। খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখুন, বয়স কমিয়ে যুবক থাকুন।
♥ শরিরের ব্যাথা ও হাড় ক্ষয় সমস্যায় :-
পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমানে "ক্যালসিয়াম" ও "ভিটামিন-সি ও ভিটামি- ডি। এসব শক্তিশালী "এন্টিঅক্সিডেন্ট" মানবদেহের "অক্সাইড" সমুহ দুর করে। যাহা"এন্টিরিউমেটিক" হিসেবে কাজ করে। যাহা মানবদেহের সাধারন ব্যাথা ও বাতের ব্যাথা প্রতিরোধে খুবই কার্যকরি এবং এতে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়। সসপ্তাহে অন্তত ৫ দিন পেয়ারা খান ভাল থাকুন ।
♥ মাসিকের ব্যাথা কমাতে :-
পেয়ারার কচি পাতার জুস বা শুধু পাাতা চিবিয়ে খেলে, মেয়েদের মাসিক চলাকালিন তল পেটের অসহ্য ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকরি। ভাল থাকুন।
♥ মুখের সুরক্ষায় পেয়ারা :-
পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি, যাহা মুখের ঘা, স্কার্ভি,বাচ্চাদের ছারু ঘা ও ও ঠোটের কোনে ঘা প্রতিরোধ করতে ও সারাতে কার্যকরি ভুমিকা রাখতে পারে। নিয়মিত পেয়ারা খান, ভিটামিন-সি এর চাহিদা মেটান ও সুস্থ থাকুন।
♥♥ অপকারিতা :-
দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগছেন এমন রোগিদেরকে বুঝে শুনে পেয়ারা খেতে হবে। অন্যথায় কোষ্ঠবন্ধতা সমস্যা বেশি হয়ে, ক্ষতি হত পারে।
আজ এখানেই, আবার আপনাদের সামনে উপকারী কোন পোস্ট নিয়ে,সাথেই থাকুন।
ছবি ও লেখা, ডাঃ এ জে এম নজরুল ইসলাম
প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
Welcome to my activities
ReplyDelete