লটকন খান ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক ও কোলেস্টেরল থেকে নিরাপদ থাকুন।


লটকোন ফল

লটকোন"ফলে ডায়াবেটিস এর শত্রু "শর্করা ও চিনি" একবারেই নাই। তাহলে ভেবে নিন, এটি ডায়াবেটিস রোগিগন খেতে পারবেন কিনা? খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা কতটুকু? আর লাভই বা কি হবে? মনে রাখবেন ডায়াবেটিস রোগিগন এফল পরিমিত  পরিমানে সারা সিজনে খেতে পারলে, সারা বছর ডায়াবেটিস কন্ট্রোল রাখতে কোন অসুবিধে থাকার কথা নয়। লটকোন খান ডায়াবেটিস কে না বলুন।


আচ্ছালামুয়ালাইকুম 

সম্মানিত পাঠক ও ব্লগার 

সবাই ভাল আছেন, আমাকেও দোয়া করবেন।
  একটি "অপ্রচলিত" ফল সম্পর্ককে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব আজকে। বাংলাদেশ, ভারত সহ অন্যান্য মহাদেশে চাষ কৃত "অপ্রচলিত" এফলটি সাধারনত 'অম্ল", "মধুর' ও "কষায়" স্বাদের হয়ে থাকে।   যাহা ছোট বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই পছন্দনীয়।

"লটকোন"ফল সম্পর্কে যতদুর জানা যায়, তাহা বিশ্লেষণ করে, ধারনা থেকে বলা যায় যে, প্রথম এ ফলগাছটি, ভারত উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বনভুমি,"ঝোপ-ঝাড়' ও পতিত জমিতে এক সময় "বুনো"গাছ হিসেবে জন্মিত। প্রথমে পশ্চিম- দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসি ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন বনে-জঙ্গলে পশু শিকার করতে গিয়ে এগাছ আবিষ্কার করেন এবং এগাছের ফলকে খাদ্য হিসেবে খেতে শুরু করেন। পরে অন্যান্য ধর্মের ও আশেপাশের লোকজনও একটু একটু করে খেয়ে পরখ করেন। এক সময় এটি প্রথমে মুখরোচক ও পরে উপকারী ফল হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেতে থাকে। কালের বিবর্তনে, মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়ে ঝোপঝাড় ও বনজঙ্গল উজাড় হতে শুরু হয়। ঠিক এমনি এক সময়ে এগাছ রক্ষা করতে এগিয়ে আসে বৃক্ষ প্রেমিক ও গাছ ও ফল প্রেমিক কৃষক গন । সেই থেকে এফলের গাছটি তাঁদের পারিবারিক বাগানে শোভা বর্ধন করে আসছে এবং সময়মত ফল দিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে এগাছের বিস্তার অনেক দেশেই ছড়িয়েছে।  কোথাও কোথাও বাণিজ্যিক ভাবে চাষের খবর পাওয়া গেলেও ব্যাপক কোন চাষাবাদের খবর পাওয়া যায়না।  সাম্প্রতিককালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, হুগলি, কুচবিহার,  বাংলাদেশের মধুপুর, টাঙ্গাইল ও ধামরাই সহ কয়েক টি স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে এফলের চাষ হচ্ছে বলে জানা যায়.

হ্যাঁ পাঠক ও ব্লগার বন্ধু গন

বলতেছিলাম "লটকন" নামক ফলের কথা।
বাংলায় "লটকোন"এর আরো কিছু নাম শুনা যায় যেমন,"লটকো," "নটকা", "নটকো","ফুলি","বুলি" ও কোথাও "গরিবের আঙুর" ইত্যাদি ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। যাকে ইংরাজিতে ডাকা হয় "বার্মিজ গ্রেপ"(Burmese Grape)নামে, কোথাও কোথাও  "রামবি" (Rambi) ও "রামবাই" (Rambai)  নামেও ডাকা হয়।

    বর্তমান সময়ে লটকন কে একটি দেশি, সুস্বাদু,ও ভেষজগুন সম্পন্ন মৌসুমি ফল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারনত আষাঢ় ও শ্রাবন মাষে এফল হাটে ও বাজারে পাওয়া যায়।

 খাদ্যমান তুলনা করলে "লটকোন" ফলে কাঁঠালের চেয়ে দুইগুন বেশি ক্যালরী শক্তি পাওয়া যায়। দেশি এফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন "সি, ভিটামিন-ডি ,ভিটামিন-এ,ভিটমিন-বি","ক্যালসিয়াম" "পটাশিয়াম", "খনিজ", ক্যারোমিন সহ অনেক রকমের পুষ্টি,  ভেষজ ও ঔষধী গুন রয়েছে। 

   বর্তমানে বাংলাদেশ সহ ভারত,পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে বলে জানা যায়।

 "লটকোন" ফল দেখতে গোলাকার ও মার্বেলের মত হয়।  এফল কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ রঙের এবং পাকলে কিছুটা সাদা রঙ ধারণ করে। পাকা অবস্থায়, দুই থেকে চারটি রসালো হালকা বেগুনি ও সাদা রঙের"ভক্ষনযোগ্য" কোষ দেখা যায়। ভেষজগুণ সম্পন্ন এ এগাছটির ছাল বাকল ও পাতা সবই আদি কাল থেকে ঔষধী কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।

রভক্ষনযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম "লটকন"ফলে রয়েছে, ১৯২ কিলোক্যালরি শক্তি এবং খাদ্য ও পুষ্টিমান বিচারে যাহা নিম্নরূপ-

* আমিষ--------------------------------১.৪২-গ্রাম

* চর্বি ------------------------------------০.৪৭-গ্রাম

* কার্বোহাইড্রেট--------------------------------নাই

* আশ-------------------------------------- ১.৩-গ্রাম

* খনিজ ---------------------------------০.১০-মিগ্রা

* ভিটামিন-বি১-------------------------০.০৭-মিগ্রা

* ভিটামিন-বি২-------------------------০.২১-মিগ্রা

* ভিটামিন-সি ----- ----------------------১৮২-মিগ্রা

* আয়রন--------------------------------০.৫-মিগ্রা ও

* পানি --------------------------------------------৯০%


পিপাসা ও বমিবমি ভাব প্রতিরোধে :-

যেকোনো ধরনের বমিবমি ভাব, বমির উদ্রেক ও বমি প্রতিরোধ ও বন্ধ করতে, লটকনে ফলে রয়েছে, "এন্টি ভমিটিং",এন্টি থার্স্টিং","এন্টিঅক্সিডেন্ট" ও প্রচুর ভিটামিন-সি। এসব উপাদান। উপাদান সমুহ যেকোন কারনেই বমিভাব ও পিপাসা হোকনা কেন, আর তা যদি বর্ষাকালে হয়, এ ফল চুষে খেলে নিমিষেই তা নিবারন হবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে :-

উপরের চার্ট দেখে বুঝতেই পারছেন পাঠক, "লটকোন"ফলে ডায়াবেটিস এর শত্রু "শর্করা ও চিনি" একবারেই নাই। তাহলে ভেবে নিন, এটি ডায়াবেটিস রোগিগন খেতে পারবেন কিনা? খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা কতটুকু? আর লাভই বা কি হবে? মনে রাখবেন ডায়াবেটিস রোগিগন এফল পরিমিত  পরিমানে সারা সিজনে খেতে পারলে, সারা বছর ডায়াবেটিস কন্ট্রোল রাখতে কোন অসুবিধে থাকার কথা নয়। লটকোন খান ডায়াবেটিস কে না বলুন।
 
ত্বকের যত্ন ও রোগ প্রতিরোধে :-

লটকোন ফলে রয়েছে ভিটামিন-এ,ভিটমিন-বি,ভিটামিন-সি,ভিটমিন-ডি,খনিজ সম্ভার,আঁশ ও অক্সাইড ও টক্সিন দুুর করার মত প্রয়োজনীয় সব উপাদান। যাহা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহকে" অক্সাইড ও টক্সিক" মুক্ত করে। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও লাবন্যতাও বৃদ্ধি পেতে  থাকে।লটকোন খান সুস্থ থাকুন।
    
মৌশুমি ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ও জ্বর সারাতে :-

প্রচুর পরিমাণে "ভিটামিন সি " সম্বৃদ্ধ মৌসুমী এফলটি, বর্ষাকালীন আদ্রতা জনিত সর্দি, কাশি, জ্বর,চোখ উঠা,গলা ফোলা ও এলার্জি জনিত সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে খুবই কার্যকরি। বর্ষাকালে এফল সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন খেতে পারলে সারা বছরই এর উপকার পাওয়া সম্ভব এবং  ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পুরন হতে পারে। অসুস্থতার সময়কালিন মুখের বিস্বাদ ও অরুচিকে সারাতে পারে এ ফল

♥ স্বাভাবিক রাখে উচ্চ রক্তচাপ :-

লটকোন ফলে বিদ্যমান "পটাশিয়াম" নামের মুল্যবান খনিজটি, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই কার্যকরি এবং মানবদেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল সহজেই ঝরিয়ে ফেলতে পারে। ফলে হৃদপিন্ডে রক্ত প্রবাহের গতি সম্পুর্ন রুপে স্বাভাবিক হয়। কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যার ঝুঁকিও কমাতে পারে লটকোন ফল।

♥ লটকন সারাবে ঘুষঘুষে জ্বর :-

যাহারা দীর্ঘদিন যাবত রাত্রিকালিন চিকন জ্বর ও ঘুষঘুষেজ্বরে ভুগে ভুগে দিন দিন কংকালসার হচ্ছেন, তাদের জন্য লটকোন এর ফল, পাতা ও শিকড় খুবই উপকার দিবে। এজন্য পাতা ও বাকল গুড়া করে বা পানিতে ভিজিয়ে রেখে, পানি টুকু খেতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যায় লটকন :-

লটকোন পাতা ও শিকড়ের রস,নতুন ও পুরাতন পেটের পীড়া সারাতে বহুকাল থেকে গ্রাম-গন্জে ব্যবহার হয়ে আসছে।  পীড়া পুরাতন হলে, বেশিদিন খাওয়ার বিধান আছে। এক্ষেত্রে মল ত্যাগ স্বাভাবিক হলে খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

 
♥ রক্ত শুন্যতায় লটকন ফল:-

লটকোন ফলে বিদ্যমান পর্যাপ্ত  আয়রণ রক্তের  "হিমোগ্লোবিন" কোষের পরিমান বাড়িয়ে রক্তশূণ্যতা দূর করে। এতে রক্তের পরিশোধন হয়, উজ্বলতা বাড়ে, দেহ কর্মক্ষম হয় ও ক্লান্তি দুর হয়।  স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমিয়ে যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেও ভুমিকা রাখতে পারে দেশি
এফলটি।

♥ এন্টিসেপটিক হিসেবে:-

 "লটকোন" গাছের পাতা ও ছালে রয়েছে "এন্টিসেপটিক " ও "এন্টিব্যাকটেরিয়াল " উপাদান। যাহা  গুড়া করে বা পানিত ভিজিয়ে রেখে, পানি টুকু খেলে বা ঘায়ের উপর লাগালে চর্মরোগে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
 
গনোরিয়ার ঔষধ তৈরিতে:-

জানা যায়, গনোরিয়া রোগের ঔষধ তৈরিত লটকোন বীজের শাস ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার হয়ে থাকে। গ্রাম-গন্জেও এ রোগের চিকিৎসায় ছাল ও পাতা ব্যাবহার করতে দেখা যায়। লটকন ফলেও স্নায়ুবিক দুর্বলতা প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে।  সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন এফল খেলে, মানবদেহের স্নায়ুকোষের গতি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেতে থাকে আর ভাবেই সক্রিয় হয়ে উঠে যৌন শক্তিও।
  
♥ হাড় ও দাতের ক্ষয় রোধে :-

  লটকন ফলে বিদ্যমান  প্রচুর "ক্যালসিয়াম' ও শক্তিশালী "এ্যামাইনো এসিড",  হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ও "কার্টিলেজ" সমুহের সুরক্ষা দেয়। এসব উপাদান বাত ব্যাথা ও সায়েটিকা প্রতিরোধ করতে পারে। হাড় ও দাতের ক্ষয় ঠেকাতেও পারে দেশি ফলটি।


ট্রেস বা মানষিক চাপ কমাতে :-

মানুষকে বেশি দুশ্চিন্তা-ভাবনা ও অবসাদ,থেকে মুক্ত করতে লটকোন ফলের "পটাসিয়াম " ও ভিটামিন-সি  খুবই দরকারি উপাদান। অবসাদ গ্রস্থ ব্যাক্তিগন,যারা কিছুতেই কোন কাজে মনোনিবেশ করতে পারছেন  তারা নিয়মিত লটকোন ফল খেয়ে ট্রেস কমাতে পারেন।

       ছবি ও লেখা, ডাঃ এ জে এম নজরুল ইসলাম

প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।