কোলেস্টেরলের সাথে হৃদরোগের সম্পর্ক ও সেক্সের কাচামাল ভাল কোলেস্টেরল।

 

প্রতিকী ছবি 

কোলেস্টেরল আসলে কি? এপ্রশ্নের❓সহজ উত্তরে বলা যায়, কোলেস্টেরল হলো দেহের অভ্যন্তরীণ কোষে আটকে থাকা, দেখতে অনেকটা মোমের মতো সাদা রঙের এক ধরনের চর্বি। আমরা যখন চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করি, তখন এসব খাবার থেকে যকৃৎ এগুলোকে চর্বিতে রুপান্তর করে। এই রুপান্তরিত চর্বিই হলো কোলেস্টেরল।

প্রিয় ব্লগার ভাই ও বোনেরা 
 
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রইল আমার ছালাম ও শুভেচ্ছা

    আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব এমন একটি বিষয় যাহা সমস্ত মানব জাতির জন্য জানা একান্ত প্রয়োজন ।  

কোলেস্টেরল এর নাম উৎস খুজতে জানা যায় যে, গ্রীক শব্দ কলে(পিত্ত) এবং স্টেরস(ঘন পদার্থ) শেষে রাসায়নিক বিভক্তি অল(অ্যালকোহল)। পরে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সকল রাসায়নিকবিদ ও বিজ্ঞানীগন একমত হয়ে রায় দিয়ে"কলেসটেরাইন " নাম হিসেবে আক্ষায়িত করে। যাহা আজকের বিশ্ব কোলেস্টেরল নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত নাম যার বাংলা অর্থ সাদা চর্বি।   
        
      আমরা জানি, রক্তে উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর  কোলেস্টেরল, মানব দেহের হৃদরোগের প্রধান কারন ।কোলেস্টেরল কাহাকে বলে, এর কাজ কি তাও কিন্তু   আমরা ভাল বুঝিনা। শুধু কোলেস্টেরলের ক্ষতির কথাই আমরা সব সময় ভেবে থাকি। আসলে কোন ধরনের কোলেস্টেরল এর জন্য দায়ী , আদৌ মানব দেহে কোলেস্টেরল এর প্রয়োজন আছে কিনা ? তাহাও সঠিক ভাবে জানিনা।

বিশেষজ্ঞ বর্ণনা মতে যতদুর জানা যায়, ভাল কোলেস্টেরল শরীরের চালিকাশক্তি তৈরির মুল উৎস। যেসব ব্যাতিত শরীর একেবারই অচল। অপরপক্ষে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল শরীরের বিষ বা কাঁটা স্বরূপ। অর্থাৎ কোলেস্টেরল এর ভাল মন্দ দুটি দিকই বিদ্যমান। এজন্যই জীবন সুস্থ ভাবে পরিচালনা করতে হলে আমাদেরকে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়াতে হবে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে হবে। মনে রাখবেন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে পারলে, উপকারী কোলেস্টেরল এমনিতেই বাড়তে থাকবে।   
     
    চিকিৎসা বিজ্ঞান এর গবেষনা ও ভাষ্যমতে , কোলেস্টেরল এর বেশ কয়টি শ্রেনি রয়েছে।
যাহা নিম্নরুপ -  

    ° হাই ডেনসিটি লাইকোপ্রোটিন (এইচডিএল)।

    ° লো ডেনসিটি লাইকোপ্রোটিন (এলডিএল) ।

    ° ট্রাই গিলি সারাইড (টিজি)।

    ° রক্তে সব ধরনের কোলেস্টেরল এর মোট পরিমান বা টোটাল কোলেস্টেরল (টিসি) ।

কোলেস্টেরল আসলে কি? এপ্রশ্নের❓সহজ উত্তরে বলা যায়, কোলেস্টেরল হলো দেহের অভ্যন্তরীণ কোষে আটকে থাকা, দেখতে অনেকটা মোমের মতো সাদা রঙের এক ধরনের চর্বি। আমরা যখন চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করি, তখন এসব খাবার থেকে যকৃৎ এগুলোকে চর্বিতে রুপান্তর করে। এই রুপান্তরিত চর্বিই হলো কোলেস্টেরল। এসব চর্বি স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহের সমস্থ রক্তনালিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
কোলেস্টেরল দেহের চালিকাশক্তি হিসেবে সমস্থ প্রকার হরমোন তৈরি করে থাকে।  চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন সমুহের পরিপাক নিশ্চিত করে শক্তিতে রুপান্তরিত করে   এবং ভিটামিন-ডি তৈরি করে থাকে ।

 আমরা যখন বেশি চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করি তখন রক্তনালি ও ধমনীর দেয়ালে বেশি চর্বির প্লাক পড়তে থাকে। আস্তে আস্তে এ প্লাক বাড়তে থাকলে এক সময় রক্ত চলাচলের গতি কমে আসতে থাকে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা বাড়তে থাকে এবং  হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা সহ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়তেই থাকে। এসব সমস্যা সৃষ্টিতে এলডিএল নামক ক্ষতিকর কোলেস্টেরল সরাসরি দায়ী।

  অপরপক্ষে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল এটিকে গলিয়ে সরিয়ে দেয় এবং মানবদেহের সুরক্ষা দিতে নিজ বসতি স্থাপন করে নেয়। ফলে হৃদপিন্ড সহ দেহ কোষে স্বাভাবিক রক্ত সরবরাহে আর কোন বাধা বা সমস্যা থাকতে পারেনা।   
 
   সাধারণত এলডিএল এর মাত্রা কমপক্ষে 100 মিলিগ্রাম/ডিএল এবং এইচডিএল এর মাত্রা 40 থেকে 60 মিলিগ্রাম/ডিএল হিসেবে গননা করা হয়ে থাকে। 

কোলেস্টেরল হলে কি করবেন?
                                
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, সবুজ ও লাল রঙের শাক-সবজী, ফল-মূল, ভিটামিন-সি সম্বৃদ্ধ খাবার, টকদই, ননীমুক্ত দুধ, দানা জাতের খাবার, মাছ, রসুন ও পেঁয়াজ এবং জলপাই তেল এইচডিএল কোলেস্টেরলের ভাল উৎস।  অপরপক্ষে গরুর মাংস, শুকরের মাংশ, খাঁসি ও ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ,ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, চিজ ও মাতৃদুগ্ধে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল।                   

মনে রাখবেন সব খাবারে ক্ষতিকর ও উপকারী কোলেস্টেরল উভয় উপাদান বিদ্যমান। কোনটিতে খুবই কম, কম, মাঝারি, বেশি এবং অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর ও উপকারী কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। কোলেস্টেরল ঠেকানো, কমানো ও বৃদ্ধি করতে কোন খাদ্য কোন ক্রমেই পরিহার করা যাবেনা, শুধু বুঝে-সুঝে খেতে হবে । বেশি চর্বিযুক্ত খাবার গুলি পরিমিত পরিমাণে এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। এভাবে উভয় খাবার একসাথেও খাওয়া যাবে। আবার কম খাবারেও শরীর দুর্বল সহ স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে । সেদিকে পুরোপুরি খেয়াল রাখতে হবে।     
 
এদের মধ্যে রক্তে "এইচডিএল"মাত্রা যার শরির এ যত বেশি থাকে,হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা তার তত কম থাকে এবং এর মাত্রা যদি অধিকহারে কমে যায় তার হৃদরোগ এর সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে।  অর্থাৎ এইচডিএল হইল মানবদেহের হৃদবান্ধব ও উপকারী কোলেস্টেরল।

      অপরপক্ষে রক্তে বিদ্যমান "এলডিএল"হৃদরোগ সৃষ্টিতে সরাসরি ভুমিকা রাখে তবে"টিজি,এলডিএল এর চেয়ে অনেকটা কম ক্ষতিকারক। অর্থাৎ এলডিএল মানবদেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল।


    টিজি মানবদেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল তবে এলডিএলে এর চেয়ে এর ক্ষতিকর ক্ষমতা অনেক কম।কোলেস্টেরল সম্বৃদ্ধ খাওয়ার পর তাহা হজম শেষে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা  বাড়িয়ে দেয় ।

কোলেস্টেরল বাড়লে কিভাবে বুঝবেন

* ঘাড়ে ও মাথার পিছনে একটানা ব্যাথা অনুভব হতে পারে।

* চোখের মনির চারপাশে ধুসর রঙের গোলকার দাগ দেখা যেতে পারে।      
 
* মাঝে মধ্যে হৃদপিণ্ডের চলার গতি বেড়ে যেতে পারে বা বুক ধড়ফড় করতে পারে।  
     
* চোখের নিচের অংশ ফোলা বা ঝুলানো দেখা যেতে পারে।

* হৃদরোগের সব রিপোর্ট ভালো তবুও বুকে ব্যাথা বা ব্যাথার অনুভব হতে পারে।   
 
  সাধারণত রক্তে দুটি উৎস থেকে কোলেস্টেরল বাড়ে বলে জানা যায়।  

   ১.  খাদা চর্বি (ফ্যাট), যাহা থেকে সরাসরি রক্তে কোলেস্টেরল প্রবেশ করে ।

   .  কলিজা (লিভার) এর কার্যক্রম এর মাধ্যমে উতপাদিত কোলেস্টেরল, রক্তে প্রবেশ  করে ।

♥   মস্তিষ্ক পরিচালনা ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কোলেস্টেরল এর ভুমিকা অত্যান্ত।
    
♥ স্টেরয়েড ও সেক্স হরমোন এর একমাত্র কাচামাল এই কোলেস্টেরল।

ত্বকের লাবন্যতা ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ধরে রাখতে এর রয়েছে মুখ্য ভুমিকা।

মনে রাখতে হবে, কোলেস্টেরল ছাড়া দেহের কোন অঙ্গ তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে পারে না ।

     অপরপক্ষে রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে, তাহা আস্তে আস্তে রক্তনালির বিশেষ বিশেষ স্থানে কোলেস্টেরল ও চর্বি জাতিয় বস্তুু জমা হতে থাকে ।  এভাবে ১০-৩০ বছর জমা হতে হতে হাট ব্লক সহ অন্যান্য অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক (ব্রেন) ,কিডনি ইত্যাদি রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি বা রক্ত প্রবাহের পথ বন্ধ করিয়া, রক্ত সরবরাহ বাধা গ্রস্ত  করে।  ফলে হার্ট এ্যাটাক,  ব্রেন স্ট্রোক ,  কিডনি ফেইলরের মত সমস্যা গুলির সৃষ্টি হয় ।

       রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হওয়া প্রকৃয়াটি অনেক ধীরগতিতে ঘটে থাক ,তাতে ১০-৩০ বছর লেগে যায়। তেমনি মেডিসিন সেবন করে কোলেস্টেরল কমানোর প্রক্রিয়া অত্যান্ত ধীরগতি  যার ভাল ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় ঔষধ সেবন করতে হবে।

    আমরা অনেক সময় কোলেস্টেরল ৬ মাষ ১ বছর কমিয়ে রেখে এর থেকে সফলতা পেতে চাই, যাহা মোটেও ঠিক নহে।

      স্বাস্থ্যবিদরা বলেন, ঔষধের চেয়ে খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম কোলেস্টেরল কমাতে অধিক কার্যকর ।

  ঔষধ খাইয়া কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করে,প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয় বলে আধুনিক বিজ্ঞান জোরালো  মত দিয়ে থাকেন। 
এসব পন্থা অনুসরণ করে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞ গন মতামত প্রকাশ করে থাকেন।    
   
        আজ এখানেই দেখা হবে আগামিতে কোন নতুন বিষয়ে পোষ্ট নিয়ে সাথেই থাকুন।

  ছবি ও আর্টিকেল- ডাঃ এ জে এম নজরুল ইসলাম

প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।


 


Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।