বড়দিন ২৫ শে ডিসেম্বর।



ক্রিস্টমাস মুলত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের  প্রধান উৎসব হলেও সকল ধর্মের মানুষের কাছেই দিনটি আনন্দে কাটে । এ উপলক্ষে একে অপরকে কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা ও উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান করা হয়। যাদের দ্বারা এসব উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান করা হয়, তাদেরকেও ধর্মীয় নানান নামে ডাকা হয় যেমন নিকোলাস, শান্তাক্লুজ, ফাদার ইত্যাদি। ধারনা করা হয় ভারত ও বাংলাদেশে  এ কার্ডের প্রচলন, ১৯ শতকের দিকে শুরু হয় ।


   এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ মোচাকৃতির পাইন বা ফার নামের বৈদ্যুতিক আলোয় সুসজ্জিত "খ্রিস্টমাস ট্রি"। যাতে জুড়িয়ে দেওয়া হয় একজন  দেবদুত ও একটি তারার  প্রতিকৃতি ।

বড়দিন

 সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানইয়া, বড়দিন সম্পর্কে লেখা শুরু করছি -  

     ক্রিস্টমাস ডে বা বড় দিনের প্রসঙ্গ আসলেই, যীশু খ্রিস্টের জন্মের বিষয়টি অবশ্যই আনতে হয়। কেননা বড়দিন মানেই যীশুখৃষ্টের জন্মদিন কথাটি অনেককে বুঝানই সম্ভব হয়ে উঠেনা।  তাই অল্প বিস্তর কিছু না লিখলে নিজকে কৃপণ মনে হতে পারে। দুচার লাইন বেশি লিখে এ থেকে মুক্ত হতে চাই।     
  
   সর্বজন স্বিকৃত জন্মের বিবরণটি মোটামুটি এরুপ।  ফিলিস্তিনের বেথেলহাম সহরের এক জীর্ণ গোশালায় মহামানব যীশু ২৫শে ডিসেম্বর  পৃথিবী আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে। কেহ কেহ বলেন কুমারী মেরি তাঁর হবু স্বামী জোসেফকে সঙ্গে নিয়ে বেথেলহাম সহরে পৌছালে সেখানেই যীশুখৃষ্টের জন্ম হয়।  এই জন্ম তারিখই ক্রিস্টমাস ডে বা বড়দিন।        
   
 যীশুখৃষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে সারাবিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায় বাৎসরিক প্রধান উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে । তবে ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটি যীশুর জন্ম তারিখটি সঠিক কিনা তানিয়ে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়না।

  আদিযুগের  খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বর্ণনা করেন যে, ২৫ শে ডিসেম্বর তারিখের ঠিক ৯ মাস পুর্বে কুমারী  মাতা মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যীশু। ধারনা করা হয় এই হিসাব অনুযায়ী ২৫শে ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিনের উৎসব পালন করা হয় । কোন কোন ধারণামতে, ঐতিহাসিক রোমান উৎসব অথবা উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবসের সঙ্গে মিল রেখেই যীশুখৃষ্টের জন্মজয়ন্তী পালনের দিন ঠিক করা হয়
জানা যায় ২০০ সালের শেষের দিকে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বড় দিন/খ্রিস্টমাস ডে শুরু হয়। প্রটেস্ট্যান্ট চার্চ ও রোমান ক্যাথলিক অনুসারীগন যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম এ উৎসব পালন শুরু করে । তারপর ২৫৪ সালে ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ৪৪০ সালে পোপ এদিনটিকে স্বিকৃতি প্রদান করেন। যতদুর জানা যায় প্রথমত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসবের বিরুদ্ধে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে ক্রিস্টমাস উৎসব পালন করা হয়।

  ক্রিস্টমাস মুলত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের  প্রধান উৎসব হলেও সকল ধর্মের মানুষের কাছেই দিনটি আনন্দে কাটে । এ উপলক্ষে একে অপরকে কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা ও উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান করা হয়। যাদের দ্বারা এসব উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান করা হয়, তাদেরকেও ধর্মীয় নানান নামে ডাকা হয় যেমন নিকোলাস, শান্তাক্লুজ, ফাদার ইত্যাদি। ধারনা করা হয় ভারত ও বাংলাদেশে  এ কার্ডের প্রচলন, ১৯ শতকের দিকে শুরু হয় ।

   এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ মোচাকৃতির পাইন বা ফার নামের বৈদ্যুতিক আলোয় সুসজ্জিত "খ্রিস্টমাস ট্রি"। যাতে জুড়িয়ে দেওয়া হয় একজন  দেবদুত ও একটি তারার  প্রতিকৃতি ।

  গোয়ালঘরে গরুর খড় খাওয়ার পাত্রে শিশু যিশুর প্রতিকৃতি, পাশেই দন্ডয়মান মা মেরি ও যোশেফের প্রতিকৃতি , ক্যাথলিকদের খ্রিস্টমাস পালনের বড় একটি অংশ মনে করা হয়

'খ্রিস্টমাস' উৎসব মুলত খৃষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে পালনের  উদ্দেশ্যে একই হলেও, বিভিন্ন দেশে উদযাপনে ও খাবার আয়োজনে ভিন্নতা দেখা যায়।

  ইউরোপের দেশ গুলোতে খ্রিস্টমাস উৎসবের সন্ধায় শিশুরা খ্রিস্টমাস গাছের নিচে মোজা ঝুলিয়ে রাখে। তাঁরা বিশ্বাস করে সান্তাক্লুজ এসব মোজা উপহারে ভরিয়ে দিবে। আবার খ্রিস্টমাস গাছের নিচে কিছু উপহার সামগ্রী রাতে রেখে দিয়া সকালে তা খুলে গ্রহণ করে এবং উপহার হিসেবে পাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে।
  যিশুর প্রসংশায় গান গেয়ে শিশুরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে আনন্দে মেতে ওঠে । এ দিনের বিশেষ খাবারের তালিকায় রাখা হয়, শুকরের মাংস, হাঁসের মাংস ,টার্কির রোস্ট, ক্রিস্টমাস কেক ,পুডিং সহ আরও অনেক কিছু ।

    আর্জেন্টিনা ,মেক্সিকো, ফ্রান্স, ও ব্রাজিলের শিশুরা উপহার সংগ্রহের জন্য তাদের জুতা আগের দিন সন্ধায় দরজার বাহিরে রেখে দেয়। এ থেকে তাঁরা পরের দিন সকালে উপহার সংগ্রহ করে।

Read More in English - Xmas day

  ফ্রান্সে এ উপহার দাতারা বনহোমি নোয়েল নামে পরিচিত। এই দিনে তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে, চর্বিযুক্ত গরুর মাংসের রোস্ট, হাঁস, রাজহাস ও টার্কির মাংস। আরও অন্যরকম ভাবে ক্রিস্টমাস উৎসব পালন করে স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা। তাঁদের খাদ্য তালিকায় রাখা হয় সেদ্ধ আলু ও ক্রিম সহ কড মাছ এবং যিনি উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান করেন তাঁকে বলা হয় 'তমতার' ।

 বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও জার্মানির ক্রিস্টমাস উৎসবে শিশুদের উপহার ৬ ডিসেম্বরে পেয়ে থাকে । এ দিনের বিশেষ খাবার হিসেবে তাঁরা আপেল ও প্রুনের সাথে রাজ হাঁসের মাংস মিশিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখে । ঐ দিনের বিশেষ   ভোজটি তাঁরা 'সেন্টার ক্লোজ' ও 'সেন্ট নিকোলাসে'র নামে আয়োজন করে থাকে।     
 
     ইতালিতে বিশেষ খাবার হিসেবে , 'ঈল' নামের ভাজা মাছের তৈরি 'ক্যাপিটোন' নামক বিশেষ ধরনের  প্রিয় খাবার । তাঁদের উপহার যিনি নিয়ে আসেন তাঁকে বলা হয় 'লা বাফেনা'।    
         
   পোলান্ডে উপহার দেন 'ফাদার ফ্রোস্ট',  . সুইজারল্যান্ডে 'লাকি সাইন্ট', হাঙ্গেরিতে 'দেবদূত, গন ও গ্রিসে উপহার আনেন 'ব্যাসিল সেইন্ট' ।

  আমার প্রানপ্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ । এখানকার 'বড়দিন" (Xmas day) উৎসব শুরু হয় ডিসেম্বর মাষের প্রথম সপ্তাহ থেকেই । প্রথমে বিভিন্ন চার্চে 'ক্যারল' গানের মধ্য দিয়া শুরু হয়। পরে দল বেধে এ গান বাড়ি বাড়ি গেয়ে ,ভোজ ও আনন্দ ফুর্তির সাথে উৎসবের জন্য অর্থও সংগ্রহ করা হয় । তাঁদের এ উৎসব জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে । বড়দিন(২৫ শে ডিসেম্বর)  শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে চলে কাংখিত উপহার বিনিময় এবং বড় দিনের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে থাকে । মধ্যরাত থেকে সুচনা হয় বড় দিনের। গীর্জায় গীর্জায় শুরু হয় বিশেষ ধরনের প্রার্থনা অনুষ্ঠান।

 এবছর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা, সেন্ট মেরি ক্যাথিড্রাল চার্চ ও মিরপুর ব্যাপটিস চার্চ বড় দিনের সাজে সুসজ্জিত করা হয়েছে। বিশেষ উৎসবের কারনে গির্জার প্রবেশপথে ক্রস দিয়া সাজানো সহ শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার সামগ্রির দৃষ্টিনন্দন দোকান সাজানো হয়েছে।

 হোটেলে 'প্যান প্যসিফিক সোনারগাঁও', হোটেল 'দ্য ওয়েস্টিন' ও 'ঢাকা রিজেন্সি' হোটেল গুলি সাজানো হয়েছে, রঙিন বিজলি বাতি ও বেলুন, ক্রিস্টমাস ট্রি ও বাহারি রঙের ফুল দিয়া। ক্রিস্টমাস উপলক্ষে অতিথি ও দর্শনার্থীগন রাতে যীশুখৃষ্টের জন্মদিনের কেক কেটে প্রার্থনায় লিপ্ত হবেন। পরদিন সকালে গীর্জায় পুনরায় একত্রিত হয়ে, কুশলাদি বিনিময়, ধর্মীয় আলোচনা, উপহার সামগ্রী আদানপ্রদান ও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হবে।

 আবারও সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই।
 এই গুরুত্বপুর্ন ধর্মীয় উৎসবে আমার জন্যও দোয়া করবেন যাতে লেখার মাধ্যমে আপনাদের সু নজর থাকতে পারি ।

আজ এখানেই, দেখা হবে আগামীতে নতুন কিছু নিয়ে।
সাথেই থাকুন 


 গ্রন্থনা - ডাঃ এ জে এম নজরুল  

 প্রাক্তন শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।