তাল ও তাল মিস্রির উপকারিতা।



"যকৃত" ও "পিত্তথলি" মানব দেহের 
অন্যতম দুইটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।এই  অংশ দুইটির সঠির সুরক্ষা দিতে, দোষক্রটি মুক্ত করতে, স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে তাল ফলের রসে রয়েছে, প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট,"ভিটামিন-সি" ও "আঁশ। যাহ পিত্তথলির সুরক্ষা দিয়া কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় পিত্তরস স্বাভাবিক ভাবে নিরসন হয়, পিত্তথলিতে অযাতিত পাথর জমতে পারেনা এবং জন্মানো পাথরও বৃদ্ধি লোপ পায়।  
তালের রসে বিদ্যমান শীতল কারক উপাদান(Cooling factor)সমুহ, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিপেইন,এন্টি ইনফ্লামেটরী উপাদান সমুহ মানবদেহের প্রশান্তি দিতে তাৎক্ষনিক ভুমিকা রাখতে পারে। তাই তালের রস  খাওয়া মাত্রই দেহ শীতল হতে শুরু করে। এতে সহজেই প্রদাহ কমে ক্লান্তি দুর যায়, শক্তি সন্ঞয় হয় এবং এতে সুনিদ্রা আনয়নে আর কোন বাধা থাকেনা

তাল/Pulmyra Palm     

আচ্ছালামু আলাইকুম

আশা করি সবাই ভাল আাছেন, আজ আমার লেখার বিষয় "তাল" সম্পর্কে।  

 তাল "পাম" গোত্রের "অপ্রচলিত" একটি ফল। এর সব গোত্রকেে এক সাথে ফ্যান-পাম বলে। ইংরেজিতে "Palmyra palm"  বলে । তাল গাছের উৎপত্তিস্থল আফ্রিকায় হলেও এশিয়া সহ প্রায় সব মহাাদেশেই কমবেশি দেখা যায়  । তাল গাছ শাখা প্রশাখা বিহিন এক ধরনের উচু গাছ। লম্বা আকৃতির গোলাকার পাখার ন্যায় বড় ও সুন্দর পাতা হয়। ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশে খুলনা ,রাজশাহী, গাজীপুর, ফরিদপুর, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় বেশি তাল গাছ দেখা যায় ।


 আমাদের দেশে সাধারনত মার্চ থেকে জুন মাষ অর্থাৎ ভাদ্র  মাসে পাকা তাল পাওয়া যায়। তবে কিছু তাল বারো মাসেই বাজারে দেখা যায়। সম্ভবত এগুলো বারমাসি জাতের হয়ে থাকবে। তাল গাছ নারী (মাদী) ও পুরুষ(মাদা)  আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। মাদী(মাতৃ) গাছ থেক ফল সংগ্রহ  ও মাদা(পুরুষ) গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। সাধারনত শীত কালে তাল গাছের রস সংগ্রহ  করা হয়।


তাল গাছের রস, তালে ফলের রস, শক্ত আটি, আঁটিতে জন্মানো শাস ও কচি অবস্থায় শাস সবই খাওয়া হয়। 


Read in English this site : Palm protects the liver, gall bladder, and Misery is cold and cough drug.

   তাল অপ্রচলিত ফল হইলেও ভারত ও বাংলাদেশের ভোজনরশিক মানুষের কাছে অনেকাংশে খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়।।

  তালের রসের ফ্লোরি , তাল বড়া, তাল পিঠা,  পায়েস, গুড়, পাটালি ,মিস্রি ও তাল গাছের রস তাড়ি হিসেবে অত্যন্ত   প্রচলিত।

  কচি তালের নরম রসালো শাস, ভারত উপমহাদেশে অত্যন্ত উপাদেয় খাবার ।

তাল গাছের রস থেকে তৈরি ভেষজ গুনে ভরপুর "তাল মিসরি" সর্দি কাশির মহৌষধ ।  তালের রস মুত্র ও মল বৃদ্ধি বৃদ্ধিকারক , শ্লেষ্মা ও পিত্ত নাশক এবং যকৃতের দোষ নিবারক।


পাকা তালে রয়েছে, ভিটামিন, খনিজ, শর্করা , পানি ও সামান্য পরিমানে চর্বি। 

প্র
তি ১০০ গ্রাম ভক্ষনযোগ্য তালে রয়েছে,৮৮ কিলোক্যালরী খাদ্যশক্তি। যাহা খাদ্যমানে নিম্নরুপ :-

* আমিষ----------------------------------০.৮ গ্রাম

* শর্করা--------------------------------২০.৮-গ্রাম 

* আঁশ-------- ---------------------------০.৬ গ্রাম

* খনিজ? -------------------------------০.৮-গ্রাম

* ক্যালসিয়াম--------------------------১০-মিগ্রা

* থায়ামিন-বি১---------------------০.০৫-মিগ্রা

* রিবোফ্লাভিন-বি২---------------০. ০৩-মিগ্রা

* নিয়াসিন-বি৩---------------------০.০৫-মিগ্রা

* ভিটামিন-সি----------------------------৬-মিগ্রা

* পানি----------------------------------------৮০%

  তাল মিশ্রী সর্দি, জ্বর ও কাশির মহৌষধ:- 

তালমিস্রী শিশুদের জ্বর,সর্দি ও ঠান্তা লাগায় যুগ যুগ ধরে ব্যাবহার হয়ে আসছে। কারন এতে কোন ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া যায়না। এর উপকারিতার কথা আজ সর্বজন শিকৃত। একারনেই হয়তবা শিশুদের ঠান্তা লাগলে, সর্দি-কাশি ও জ্বর হলে প্রথমেই তাল মিশ্রীর খোজ করা হয়। আধুনিক চিকিৎসার সহিত পাল্লাদিয়া চলতে এ ভেষজগুণ সম্পন্ন ওষুধটি এখনো অনেক এগিয়ে। হাজার হাজার বছর আগে যখন চিকিৎসা শাস্ত্র আবিষ্কার হয় নাই তখন থেকেই "তালমিসরী" গ্রামিন চিকিতসায় সুনামের সহিত ব্যবহার হয়ে আসছে। তাল মিস্রী  তুলসী পাতার রসের সহিত মিশিয়ে গরম করে, ঠান্ডা হলে খাওয়াতে হয়। শিশুর বয়স বুঝে, কোয়ার্টার, হাফ এক বা দুই চামুর পরিমান খাওয়ানো যেতে পারে এবং শুধু মিস্রি খেয়েও উপকার পাওয়া যাবে। মনে রাখবেন শুধু শিশুই নয়, তাল মিস্রি বয়স্কদের জন্যও অমৃতবত। বয়স্কদের হাপানি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারি।

 # ক্লান্তি দুর করে সুনিদ্রা আনয়নে :-

তালের রসে বিদ্যমান শীতল কারক উপাদান(Cooling factor)সমুহ, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিপেইন,এন্টি ইনফ্লামেটরী উপাদান সমুহ মানবদেহের প্রশান্তি দিতে তাৎক্ষনিক ভুমিকা রাখতে পারে। তাই তালের রস  খাওয়া মাত্রই দেহ শীতল হতে শুরু করে। এতে সহজেই প্রদাহ কমে ক্লান্তি দুর যায়, শক্তি সন্ঞয় হয় এবং এতে সুনিদ্রা আনয়নে আর কোন বাধা থাকেনা।

# পাতলা পায়খানা ও কোষ্টকাঠিনে তালের রস:-

পাতলা পায়খানা ও আমাশয় রোগে তালের রসের ব্যবহার সেকেলে হলেও অধ্যবধি এর উপকারিতার কোন কমতি দেখা যায়না। গ্রাম গন্জে এর ব্যাবহার আগের মতই হচ্ছে। তালের রসে রয়েছে শক্তিশালী "খাদ্য আঁশ"সমুহ। যাহা অন্ত্রের "মিউকাস মেমব্রেন" গুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং শক্তিশালী করে তোল। এতে পেটে অযাতিত ভাবে জমানো ক্ষতিকর মিউকাস গুলো সহজেই মলে পরিনত হয় এবং মলাকারে বের হয়ে যায়। এতে পেট পরিস্কার হয়ে আমাশয় রোগ নিবারিত হয়ে, পেটের মোচড়ানো ব্যাথাও কমে যায়। ফলে অন্ত্রে জমানো পঁচা ও শুকনো মল গুলো নরম হয়ে, অন্ত্রের জমানো গ্যাস সহ মল গুলি নিরসন হতে থাকে।এভাবেই ধিরে ধিরে কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা একসময় সম্পুর্ন রুপে  দুর হয়ে যায়। ভাল থাকুন।

# পিত্তদোষ ও যকৃতের সমস্যা সমাধানে :-

"যকৃত" ও "পিত্তথলি" মানব দেহের গুরুত্বপুর্ন মেকানিজম গুলির অন্যতম দুইটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।এই  অংশ দুইটির সঠির সুরক্ষা দিতে, দোষক্রটি মুক্ত করতে, স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে তাল ফলের রসে রয়েছে, প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট,"ভিটামিন-সি" ও "আঁশ। যাহ পিত্তথলির সুরক্ষা দিয়া কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় পিত্তরস স্বাভাবিক ভাবে নিরসন হয়, পিত্তথলিতে অযাতিত পাথর জমতে পারেনা এবং জন্মানো পাথরও বৃদ্ধি লোপ পায়। 

# দাত ও হাড়ের  ক্ষয়রোধে :-

 তাল ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে "ক্যালসিয়াম" ও "ফসফরাস" এসব উপাদান যে কোন পুরাতন ব্যাথা এবং জয়েন্টের ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকরি।  এর শক্তিশালী  "এন্টিঅক্সিডেন্ট" সমুহ হাড় ও দাতের ক্ষয় রোধে ভুমিকা  খুবই প্রয়োজনীয়। তাল খান পুষ্টি নিন এবং ভাল থাকুন।

আরও পড়ুন- তুলসীপাতা 

তাল নিয়া লেখা আজ এখানেই, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে,সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ 

  ছবি ও লেখা - ডাঃ এজেএম নজরুল

 প্রাক্তন শিক্ষক, হোমিও ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট। 



Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।