তুলসীগাছ ও হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক আক্ষ্যান।



তুলসীপাতা
  সম্মানিত ব্লগার ও দর্শক , শুভেচ্ছায় স্বাগতম  ,
 আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি,  'তুলসী পাতা'র উপকার সম্পর্কে।
আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং সেই বহুল প্রচলিত ও উপকারী গাছ 'তুলসীপাতা' দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন।  
 ঔষধিগুনে ভরপুর  'তুলসীগাছ' আদি কাল থেকে প্রাকৃতিক ভাবে ব্যবহার হয়েে আসছে। এ গাছের ডালপালা,ফুলফল, পাতা,ছালবাকল, ও শিকড় কান্ড সবই ব্যবহার হয়ে আসছে 

ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে তুলসীগাছ নিজস্ব সুগন্ধিময়, তিক্ত ও কটু রস যুক্ত, রুচি কারক, বায়ু নাশক,হজমশক্তি বৃদ্ধি কারক, কৃমি নাশক,সর্দি কাশি নাশক, এন্টিহিস্টামিন, এন্টিসেপ্টিক, এন্টিবায়োটিক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পুজোর প্রধান সরঞ্জাম।

   পৌরাণিক আক্ষ্যান অনুযায়ী দানব শংখচুড়ের স্ত্রীর নাম ছিল "তুলসি"। হিন্দু ধর্মের পূজা পার্বনে বহুল  ব্যবহৃত হয় এই  তুলসী গাছ ।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, তুলসী গাছের পাতায় রয়েছে  প্রচুর পরিমানে এন্টিহিস্টামিন , এন্টিব্যাকটিরিয়াল, এন্টিভাইরাস, এন্টিফাঙ্গাল ,  ভিটামিন সি, ফাইটোনিক ফ্রি স্ট্রেস র্যাডিকেল, এ্যাসেনসিয়াল অয়েল ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস  ও  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।

  ♥ তুলসীপাতা আজীবন যৌবন ধরে রাখে- 

তুলসীপাতায় রয়েছে যৌবন ধরে রাখার ও দেহে বল ও শক্তি বাড়ানোর যাদুকরী ভুমিকা,  এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং শক্তিশালি স্টিমুলেক্স। যাহা আপনার মরা যৌবনে ফুল ফোটাবে,  যৌবন ধরে রাখবে ও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।

  এজন্য আপনাকে নিয়মিত ২-৩ টি তুলসীপাতা সকালে খালি পেটে খেতে হবে, এব্যাপারে আপনি একজন হারবাল বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ ও নিতে পারেন।

  ♥ তুুলসীপাতা সর্দিকাশির মহৌষধ -

  তুলসীপাতায় রয়েছে , এন্টিহিস্টামিন, এন্টিএ্যালার্জিন, যা সর্দিকাশি সারাতে ,হাজার হাজার বছর  ধরে আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। গ্রাম গন্জে , মা দাদিমারা ছোট্টমনিদের সর্দিকাশিতে প্রথমেই তুলসীপাতার রস সুফলের সহিত সেবন করে আসছে ।
 ৩-৪টি তুলসীপাতা রস তৈরি করে মধু বা চিনির সহিত মিশাইয়, দিনে ২-৩ বার, প্রয়োজনে ২-৩ ফোঁটা আদার রস মিশাইয়া খাওয়াইলে,  সর্দিকাশি আরোগ্য হবে।

  ♥ তুলসীপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে -

    ডায়াবেটিস কমাতে, তুলসীপাতায় রয়েছে ডায়াবেটিস কমানোর মত যাদুকরী ভেষজগুন যাহা প্যান্ক্রিয়াসের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার যাদুকরী শক্তি ।   প্রতিদিন ২-৩ তুলসীপাতা ঠান্ডা পানি সহ খালি পেটে  বা চায়ের সাথে খাইলে,   রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে,  গ্লুকোজ মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।  খেয়াল রাখতে হবে  সপ্তাহে অন্তত ১ বার গ্লুকোজ লেবেল পরীক্ষা করতে হবে, তানাহলে গ্লুকোজ লেবেল কমে, হাইপো  হইলে, হিতে বিপরীত হতে পারে।

   ♥ তুলসীপাতা মানষিক চাপ ও মাথা ধরা কমাতে পারে-

  মানসিক চাপ কমাতে,   তুলসীপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি ট্রেস এজেন্ট,  মানসিক চাপ ও মাথা ব্যাথার সমস্যা থাকলে সকাল সন্ধ্যা ২-৩ টি তুলসীপাতা, ঠান্ডা পানি সহ বা চায়ের সাথে মিশাইয়া খাইলে, মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

♥ তুলসীপাতা ফুসফুসের বল বাড়ায়- 

   তুলসীপাতায় রয়েছে শক্তিশালী " ইগোয়েনাল, সিনেওল ক্যাম্পেই "যাহা ফুসফুসের সুস্থতায় সার্বিকভাবে  উপকারী,এছাড়া  সর্দিকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, মৌসুমী জ্বর,মাথা ব্যাথা ইত্যাদিতে তুলসীপাতা  বহু কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।

♥ তুলসীপাতা হৃদপিণ্ড সচল রাখে - 

     তুলসীপাতায় রয়েছে 'ইউজেনল' নামে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিজেন্ট, যাহা মানবদেহের উপকারী  কোলেস্টেরল  (এইচডিএল) বাড়িয়ে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে আনতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে, তাহাতে  হার্ট ফেইলর,ব্রেনস্ট্রোক ও কিডনি ড্যামেজের মত ভয়াবহ রকমের অবস্থা থেকে মুক্তি দান করে।


♥ তুলসীপাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে-
  
   তুলসীপাতায় রয়েছে,ভিটামিন "সি ", শক্তিশালি ক্যান্সার বিরোধী" কার্সিনোজেনিক প্রপার্টিজ ও এন্টিঅক্সিজেন্ট,  যাহা গলা, মুখ ও স্তন ক্যান্সারের  বিরুদ্ধে শক্তিশালি ভুমিকা রাখে।

  ♥ তুলসীগাছ বাড়ির বিশুদ্ধ অক্সিজেনের আধার-

    গবেষণায় প্রমাণিত তুলসী গাছ দিনরাত ২৪ ঘন্টা অক্সিজেন ত্যাগ করে, তাই যত্নে অযত্নে গৃহে একটি তুলসী গাছ থাকলে, আপনার পরিবারের অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব ।  তাই আপনার পরিবারের সুরক্ষায় , বারান্দা কিংবা জানালার ধারেে যেখানে সামান্য একটু রোদ পড়ে সেখানেই একটি তুলসী গাছ লাগিয়ে ফেলুন ।   
    
   আজ এখানেই, আবার কথা হবে আগামীতে, নতুন কোন উপকারি পোস্ট নিয়ে।

  ছবি ও লেখক, ডাঃ এজেএম নজরুল ইসলাম

    প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
  

Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।