ডায়াবেটিস এক নিরব ঘাতক ব্যাধি।




ডায়াবেটিস মাপার মেশিন      

 "ডায়াবেটিস" অসংক্রামক নিরব এক "ঘাতক ব্যাধি"র নাম। আজ এর আক্রমন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে "মহামারি" রুপ ধারন করেছে। ডায়াবেটিস এর মরন ছোবল থেকে যুবা, বৃদ্ধ, মহিলা, গর্ভবতী মহিলা, এমনকি মায়ের পেটের সন্তানটিও রক্ষা পাইতেছনা

গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস পরীক্ষাকালীন, আমার এত দিনের অভিজ্ঞতায় ডায়াবেটিস এর শুধু একটি লক্ষনের শুধু মিল দেখতে পেয়েছি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে বা সুগার লেবেল মাত্রাতিরিক্ত হলে, রোগীর মুখ ও গলা শুকাতে থাকে এবং অতিরিক্ত পিপাসার সাথে প্রস্রাব বেশি পরিমাণে ও ঘন ঘন হতে থাকে। এই ছাড়া কোন প্রকার মিল দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না।

   প্রিয় পাঠক ও ব্লগার বন্ধুগন

সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের লেখা।
বর্তমান ভেজাল খাদ্যের এই যুগে আমরা যে কত রকম "ভেজাল খাদ্য" দৈনন্দিনের খাবার তালিকায় রেখে গ্রহণ করিতেছি তার কোন হিসাব আমাদের কাছে নাই। কিসে নাই ভেজাল?  তার সঠিক সমীক্ষাও আমরা রাখছিনা। স্বয়ং ভেজাল উৎপন্নকারী ও ভেজালকারি ব্যাক্তিটি কি খাবার খেয়ে জীবনধারন করে তাও আমরা ওয়াকেবহাল নই। যা দেখতে পাই,তাতে শুধু ভেজাল আর ভেজাল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, খাদ্য নিয়ে যেন ভেজালের মহোৎসব চলছে।        শাক,সবজি,মাছ,মাংস, দুধ,ডিম, তেল,চর্বি, ঘি,মাখন, চাল,ডাল, আটা,ময়দা, ফল, মুল এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সহ খাবার ও ব্যবহার যোগ্য বলতে যা বুঝায় সবই যেন ভেজালে ভরপুর। তারপরও আমরা জেনেশুনে এসব ভেজাল যুক্ত খাবার, জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টায় অহরহই খাচ্ছি এবং ব্যবহার করতেছি। এছাড়া আর যে কোন পথও খোলা নাই আমাদের কাছে। এছাড়া আার কোনই উপায় নাই মানুষ সহ প্রাণীকুলের।


এসব 'ভেজাল খাদ্য" গ্রহণ করে, মানবদেহ কত যে নাম জানা-অজানা "ভেজাল রোগ" এর কবলে পড়তেছে তারও ইয়ত্তা নাই। এসব রোগের লক্ষন দেখে স্বয়ং বিশেষজ্ঞগন আঁতকে ওঠেন। তাঁদের ডাক্তারী বিদ্যায় এসব লক্ষন ও সমস্যা সম্পর্কে তারা অবহিত হতে পারেন নাই। অর্থাৎ রোগটি তাঁদের শিক্ষনীয় রোগের তালিকায় একেবারে নতুন। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে রোগটি আসলো কিভাবে? উত্তর জানিনা। উত্তর পেতে "রোগী লিপি" পাঠানো হলো, রোগ গবেষকদের কাছে। তাঁরাও তিন থেকে পাঁচ বছর পর জানান দিল এরোগ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারন খুঁজে পাওয়া যায় নাই। আরও গবেষণা চলছে। চলছে তো চলছেই, চলতেই থাকুক গবেষণা । আসুন, আমরা চলে যাই মুল গ্রন্থনার দিকে। 

পাঠক বন্ধুগন                                                       

   যাক সেসব কথা। এবার আসা যাক মুল আলোচনায়। আমার আজকের উপস্থাপনার বিষয় থাকছে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে "ডায়াবেটিস" রোগ সম্পর্কে কিছু আলোচনা। তাঁদের মুল ভাষ্য থেকে যতদূর জানা যায়, 'ডায়াবেটিস"রোগের উৎপত্তি সম্পর্কেও সঠিকভাবে কোন কিছুই এখনো জানা যায়না। আমি একজন ডিভাইসে ডায়াবেটিস চেকার। এ সুবাদে দু-চার-দশজন ডায়াবেটিস রোগীর সহিত আমার সাক্ষাৎ হওয়া খুবই বাঞ্ছনীয় এবং প্রাসঙ্গিক বলে আমি মনে করি।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য গ্রহণ ব্যাপারে দেখা যায়, কারো কারো রাক্ষুসে ক্ষুধা হয়, আবার কেউ কেউ ক্ষুধাহীনতায় ভুগতে থাকেন । অনেককে আবার দেখা যায়, অভাবের তাড়নায় কোন বেলায়ই পেট পুরে ভাত টুকুও খেতে পায়না, তারো ডায়াবেটিস। পরিশ্রমের ব্যাপারে দেখা যায়, কেউ সারাদিন প্যাডেল মেরে ভ্যান চালায় কেউবা সারাদিন  মাথায় করে ইট-বালু বহন করে কেউবা কাজের অংশ হিসেব দশ-পনেরো  কিলোমিটার হাটাহাটি করে, তাদেরও দেখলাম  ডায়াবেটিস। কারো খাওয়ার পর সুগার বাড়ে, কারো আবার খাওয়ার পর কমে। কারো হাটলে বাড়ে, কারো আবার হাটলে কমে। কেউ কেউ ব্যাথা, দুর্বলতা ও হার্টের সমস্যায় হাটাহাটি করতে পারছেন না,কেউ আবার দিব্যি চলাফেরা করছে। কারো কারো প্রস্রাব ঘন ঘন হচ্ছে কিন্তু ডায়াবেটিস নাই । কারো প্রস্রাব স্বাভবিক কিন্তু ডায়াবেটিসে ভরপুর । কারো যৌন ক্ষমতা ঠিক আছে, কারো একেবারে নাই।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর ওজন কমার কথা থাকলেও, আমি আশি শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে দেখলাম, তাঁদের ওজন বাড়তেছে এবং অবাঞ্ছিত ওজন কমাতেও পারছে না।
 কি স্থুলকায় কি ক্ষীণকায়, কি ধুমপায়ী কি অধুমপায়ী, কি শিশু, কি যুবা, কি বৃদ্ধ, কি পুরুষ, কি মহিলা? সবার ডায়াবেটিস দেখার দুর্ভাগ্য আমার হলো। দুদিন বয়সের  শিশুরও ডায়াবেটিস ধরা পড়ল আমার ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সুগার রক্তে পাওয়া গেলেও কারো পায়ের ঘা সহজে শুকাচ্ছে, কারো আবার সুগার কম থাকলেও পায়ের ঘা শুকাচ্ছে না।
গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস পরীক্ষাকালীন, আমার এত দিনের অভিজ্ঞতায় ডায়াবেটিস এর শুধু একটি লক্ষনের শুধু মিল দেখতে পেয়েছি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে বা সুগার লেবেল মাত্রাতিরিক্ত হলে, রোগীর মুখ ও গলা শুকাতে থাকে এবং অতিরিক্ত পিপাসার সাথে প্রস্রাব বেশি পরিমাণে ও ঘন ঘন হতে থাকে। এই ছাড়া কোন প্রকার মিল দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না।

   বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে যতদূর জানা যায়,         "ডায়াবেটিস" অসংক্রামক নিরব এক "ঘাতক ব্যাধি"র নাম। আজ এর আক্রমন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে "মহামারি" রুপ ধারন করেছে। ডায়াবেটিস এর মরন ছোবল থেকে যুবা, বৃদ্ধ, মহিলা, গর্ভবতী মহিলা, এমনকি মায়ের পেটের সন্তানটিও রক্ষা পাইতেছনা। এই মহামারি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে বৈ কমছে না। কি উন্নয়নশীল,  আর কিবা অনুন্নত, সব মহাদেশে ডায়াবেটিস আজ নিরব ঘাতক হিসেবে তার জায়গা করে নিতে খুবই তৎপর । তার এমন বিমুর্ত মুর্তি নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ গনও। আর চিকিৎসা খরচ মেটাতে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত সাধারন রোগিগন, শ্রষ্টার কৃপা কামনা করে, নিজের  জীবন তার কাছেই হস্তান্তর করে রেখে দিচ্ছে । ফলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে হাজার হাজার ডায়াবেটিস রোগি।

 এসব সমস্যা সমাধানের এবং প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। যারা এসব সমস্যার সমাধান করতে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন, তাঁদের সামান্য সহযোগিতা করতে, এসব বাস্তবচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। রাস্ট্র ক্ষমতার আওতায় কুলানো সম্ভব হলে, অন্যান্য রোগের মত ডায়াবেটিস রোগীদের ফ্রীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এব্যাপারে আমি বাংলাদেশ সরকার বাহাদুর এর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
                               
 এবার আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস  বিশেষজ্ঞগন কি বলছেন "ডায়াবেটিস রোগ' সমর্কে:-

♥ ডায়াবেটিস কাকে বলে:-

স্বাস্থ্যবিদদের লেখনী,  প্রচারণা ও মতামত বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, বিপাক জনিত বা শর্করা জাতিয় খাবারের সমস্যার নামই ডায়াবেটিস।

♥ ডায়াবেটিস কয় ধরনের:-

বিশেষজ্ঞ দের মতে, ডায়াবেটিস মুলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

(১) টাইপ-১ ডায়াবেটিস -

 এ পর্যায়ে রোগি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও অগ্নাশয় থেকে কোন ইনসুলিন তৈরি হয়না এবং রোগীকে সারা জীবন ইনসুলন গ্রহন করতে হয়। মুলত:এটি ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস।  এর প্রধান  লক্ষণ গুলোর মধ্যে দেখা যায়,রোগী ঘন ঘন প্রস্রাব করে,ঘন ঘন গলা শুকিয়ে যায়, পানির পিপাসা বেশি হয় এবং পর্যাপ্ত পুুুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা সত্বেও ওজন কমতে থাকে।  এ রোগির সংখ্যা সকল মহাদেশেই অনেক কম এবং এটি শুধু কম বয়সীদের হয়ে থাকে।

(২) টাইপ-২ ডায়াবেটিস- 

   যাহা ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস।
বিশ্বে এধরনের ডায়াবেটিস রোগির সংখ্যা ৮০ শতাংশের বেশি । যা বয়স্কদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।  এদের রোগ লক্ষনের ধরন টাইপ-১ এর মত এভাবে প্রকাশ পায়না । ফলে রোগী তার প্রাথমিক অবস্থায় বা সুপ্ত ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বা বুঝতেও পারেনা। রোগি অন্য কোন রোগ চিকিৎসার জন্য বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে, হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে অন্য কোন রোগের চিকিৎসা নিতে এসে জানতে পারেন, তিনি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে,অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবন যাপন,বেশি ওজন বৃদ্ধি বা বেশি মোটা হওয়া,অত্যধিক মানষিক চাপ ও ধুমপানকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারন বলে উল্লেখ করে থাকেন।

♥ গর্ভাবস্থায় মায়েদের ডায়াবেটিস :-

ডায়াবেটিস গবেষক ও স্বাস্থ্যবিদ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, উল্লেখিত দুধরনের ডায়াবেটিস এর সাথে পাল্লাদিয়া দিন দিন বেড়েই চলেছে নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। যাকে বিশেষজ্ঞ গন সংক্ষেপে "জিডিএম" নামে বলতেছেন। জিডিএম শুধু মায়েদের গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, গর্ভবতী মায়েরা তার গর্ভকালিন ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না হলে মা নিজে ও গর্ভে আগত সন্তান যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতায় পড়তে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সঠিক কোন কারন সম্পর্কে আজ পর্যন্ত জানা না গেলেও, বিশেষজ্ঞ গন ধারনা করে থাকেন , রোগির পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভিণীর  ডায়াবেটিস হওয়ায় আশংকা বেড়ে যায়।এব্যাপারে গর্ভবতী মহিলার পরিবারের সদস্যদের বেশি সচেতন হতে, পরামর্শ দিয়া থাকেন বিশেষজ্ঞগন।

♥ ডায়াবেটিস এর কারন সমুহ :-

একজন  ব্যাক্তি নানান কারনে ডায়াবেটিস  আক্রান্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগন মত দিয়া থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে আরো কিছু কারনকেও তাঁরা দায়ি করে থাকেন।

* জন্ম ও পরিশেগত কারন কে টাইপ-১ ডায়াবেটিস জন্য দায়ী হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন বিশেষজ্ঞ গন। তাঁদের মতে প্রতিবছর ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা এবং এতে শুধু তরুন প্রজন্মই আক্রান্ত হচ্ছে।

* টাইপ-২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ গন বলেন, মা ও  বাবার কারো ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার উভয়ের সমস্যা থাকলে, সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সব্ভাবনা বহু গুন বেড়ে যায়। আশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া,অধিক শর্করা যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করে অলস জীবন যাপন করা,বেশি মোটা হওয়া বা ওজন বেশি বেড়ে যাওয়াকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য দায়ী করে থাকেন বিশেষজ্ঞ গন। তাঁরা আরও বলেন, কারো কারো উচ্চতা অনুসারে আদর্শ ওজনের কম হলেও এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

* বিশেষজ্ঞদের মতামতে যানা যায় যে,যাদের উচ্চ https://safemedi.blogspot.com/2020/02/the-world-is-waiting-to-be-deserted.htmlরক্তচাপ সমস্যা ও কোলেস্টেরল আধিক্য আছে তাদেরও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়।

♥ কি করে বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে:-
* মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞগন, ডায়াবেটিস এর মুল কারন গুলোকে তিনটি(৩) ইংরাজি P (পি) এর মাধ্যমে সহজে বুঝিয়েছেন।

( ) পলিফেজিয়া বা বা ক্ষুধা বেশি লাগা

() পলিডিপসিয়া বা অধিক পিপাসা বা তৃষ্ণা হওয়া, () পলিইউরিয়া বা ঘন ঘন পরিমানে বেশি প্রস্রাব হওয়া ।
তাঁরা আরও কিছু লক্ষনও উল্লেখ করে থাকেন, যেমন-
প্রস্রাবে ইনফেকশন, মুখ ও গলা শুখানো, কোন কারন ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, দুর্বল বোধ করা, শরিরের ঘা শুকাতে দেরি হওয়া, হাত পা ভারি বা অবস লাগা মনে হওয়া ও খোলা জায়গায় প্রস্রাব করলে পিপড়া বসা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ গনের ভাষায় ডায়াবেটিস এর এসব কারনকে মেডিকেল টার্মে "নিউরোপ্যাথি" বলা হয়ে থাকে।

♥ কিভাবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা-নিরিক্ষা করবেন :-

* স্বাস্থ্য ও ডার্মাটোলজিস্টগন বলেন, কারো ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্মাবধানে তিন ধাপে সুগার লেবেল পরীক্ষা -নিরিক্ষা করতে হবে।

* পরীক্ষার আগে অন্তত আট ঘন্টা পেট খালি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে সকালে ঘুম থেকে উঠে শর্করা পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা যদি শর্করার পরিমান ৭(সাত) বা তার বেশি থাকে তখনি ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

* আবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পর পরীক্ষা করে যদি কারো শর্করা পরিমান এগারো দশমিক এক(১১.১) বা তার বেশি থাকে তাহলে তার ডায়াবেটিস আছে বলে বিবেচিত করা হয়। কখনো কখনো এই দুইটি পরীক্ষার ফলাফল  স্বাভাবিক থাকলেও ডায়াবেটিস  নাই বলে নিশ্চিত করে বলা যায়না। আরও সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে "এইচবিএওয়ানসি" (HbA1c) নামের আরও একটি  পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।  এ পরীক্ষায় রোগির ১২০ দিনের রক্তে শর্করার গড় পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তের লোহিত কণিকাও পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় যদি ছয় দশমিক পাঁচ (৬.৫) বা তার বেশি শর্করার পরিমান পাওয়া যায় তখন নিশ্চিত বলা যায় রোগী ডায়াবেটিস আক্রান্ত।

♥ চিকিৎসা ও ব্যায়াম :-

* স্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিস বিদদের প্রকাশিত মুল্যবান লেখনি পড়ে যতদূর জানা যায় যে,একজন ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ওষুধ এই তিন নিয়ম মেনে সুস্থ থাকতে হবে। তারা আরও বলেন  প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে,চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগিদের ব্যায়াম বলতে দ্রুত হাটা-চলাকে উত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
হাটাহাটি প্রশ্নে সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ১৫০ মিনিট হাটতে হবে। অন্য ভাবে বলতে গেলে প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট নিয়ম করে হাটতে হবে। কোন ক্রমেই একদিনের বেশি হাটা বন্ধ করা সমিচিন হবেনা বলে তাঁরা জানান।

চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যাবস্থাপনা :-

 ডায়াবেটিস চিকিৎসার শুরুতেই, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞগন আবারো তিনটি সংক্ষিপ্ত  ডি(D)এর অনুসরণ করতে বলেন :-

 () ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রন করা। তাঁরা আরও বলেন, এ ব্যাবস্থা যথাযথ মেনে ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগি খুব সহজেই ভাল থাকতে পারে।

() ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা পুর্ন জিবন যাপন। (১) ও (২) পন্থা সঠিকভাবে মেনে ৮০ ভাগ রোগি স্বাভাবিক জিবন যাপন করতে পারেন।

() ড্রাগ বা ওষুধ সেবন। যাহা অল্প সংখ্যক রোগিরই প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ মতামতে আরও জানা যায়, শুধু  প্রথম ও দ্বিতীয় ডি(D) মেনে ৮০ ভাগ রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা সব্ভব।  তাঁরা আরো বলেন,প্রথম দুটিকে বাদ দিয়া শুধু ঔষধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস কমানোর চেষ্টা পুরোটাই ব্যার্থ হওয়ার সম্ভাবনা যা একে বারেই দুরুহ। নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ও কায়িক পরিশ্রমই ডায়াবেটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধ করার সঠিক উপায়।

চিকিৎসার সাথে কি করবেন - 
সব সময় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুল করা যাবেনা। তাঁদের দেওয়া খাদ্য চার্ট মেনে চলতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে ও চিকিৎসা বিধি মেনে চলতে হবে। 

গ্লুকোমিটার দিয়া মাঝে মাঝে ডায়াবেটিস পরীক্ষা  করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের সবার সুরক্ষায়, বাড়িতে নিজের একটি গ্লুকোমিটার রাখতে হবে। সে মোতাবেক ডাক্তারকে জানাতে হবে।

♥ "ডিএম"(DM) ম্যাথোড মেনে চলতে হবে।

ডি(D)=ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে।
এম(M)=মোটিভেশন বা প্রেরণা রোগ বিষয়ে জানা।  ডাক্তারের দেওয়া আদেশ ও নিষেধ জেনে নিজেই নিজের ডাক্তার হতে হবে। নিজের বিবেক ও বুদ্ধি খাটিয়ে, বিশেষজ্ঞ পরামর্শের সহিত মিল রেখে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও জানুন- আঁখের উপকারিতা 

নিয়মিত পায়ের, দাতের, চোখের যত্ন নিতে হবে। পা পরিস্কার রাখতে হবে এবং ভেজাও রাখা যাবেন। আঘাত থেকে পা কে রক্ষা করতে, সব সময় মোজা সহ সু পরে থাকতে হবে। পায়ের  সামান্য আঘাত বা আচড়ে, আপনি পঙ্গু  হয়ে যেতে পারেন বিশেষজ্ঞগন মত দিয়ে থাকেন।

ডায়াবেটিস নিয়ে আমার আজকের উপস্থাপন, এখানেই শেষ করছি। আবার আসব নতুন কোন বিষয়ে লেখা নিয়ে। সাথেই থাকুন।

ছবি ও আর্টিকেল, ডাঃ নজরুল ইসলাম।

লেখক প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।

                    


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।