তরমুজ ফলের উপকারিতা ও সৌন্দর্য চর্চা।



তরমুজ

আদিকাল থেকে "রুপচর্চা"য় তরমুজের ব্যবহার হয়ে আসছে । পাকা তরমুজ মুখমন্ডলে ঘষে ঘষে ৫ মিনিট লাগান । এবার শুকাইলে ১০ মিনিট পর সাবান ছাড়াই ধুয়ে ফেলুন। টিস্যু পেপার দিয়ে আলতো করে মুছে নিন । এভাবে এক সপ্তাহ করুন । দেখবেন আপনার চেহারাও তরমুজের মত রঙ হয়ে গেছে ।


তরমুজ /Watermelon
(Citrullus Lanatus)
সন্মানিত পাঠক
আশাকরি সবাই ভালোইু আছেন। আমিও সবার দোয়ায় ভাল থাকতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন ।     
আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব সবার পরিচিত, মিষ্টি স্বাদের, গ্রীষ্মকালিন উপকারী ফল "তরমুজ" সম্পর্কে।

মহান আল্লাহ পাকের সুচি অনুযায়ী যখন যা কিছু মানব কল্যানে প্রয়োজন তাহাই তিঁনি করে থাকেন। গরমকালের জন্য মানবকল্যানে তরমুজ উপযুক্ত ও উপকারী ফল হিসেবে পাওয়া এ যেন তাঁরই খাঁস নিয়ামত।

 তরমুজ গ্রীষ্মকালিন প্রশান্তিদায়ক  ঠান্ডা ফল । ফলটি আকর্ষনীয় রঙ ও মিস্টি স্বাদের হয়ে থাকে। পৃথিবীতে অনেক সাদা, কালো, নীল,ডিজাইন রঙ, ছোট-বড়, গোল, লম্বা, চ্যাপ্টা অনেক রঙ ও আকারের তরমুজ দেখতে এবং নাম শুনতে পাওয়া যায়। মুলত তরমুজ গ্রীষ্মকালিন ফল হলেও আজকাল সারা বছরই শহর কিংবা হাটে-বাজারে হাইব্রিড তরমুজ পাওয়া যায়     

তরমুজ ভিটামিন সম্বৃদ্ধ একটি ফল। মিস্টি স্বাদের এ ফলটি আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে । এতে রয়েছে অতি সামান্য ক্যালরি।  তাই তরমুজ খাইলে ওজন বৃদ্ধির পাওয়ার কোন রকমের  সম্ভাবনা থাকেনা
মৌসুমী এ ফলটির নানা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে । এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ,সি,পটাসিয়াম ও আঁশ।

খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞগানের মতে,তাৎক্ষণিক শরিরে পানির  অভাব পুরনে তরমুজ ই একমাত্র আদর্শ ফল। এ ফলে রয়েছে ৯২ % পানি । গ্রীষ্মের পচন্ড তাপদাহে একফালি তরমুজ নিমিষেই আমাদের তৃষ্ণা মিটাতে পারে।

১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য তরমুজ ফলে রয়েছে ৩৬ কিলক্যালরি শক্তি, যাহা খাদ্য ও পুষ্টি মান বিশ্লেষণে নিম্নরুপ -    
      
 * প্রোটিন --------------------------- ০.৬১ গ্রাম

 * কার্বোহাইড্রেট ----- --------------- ৭.৬২গ্রাম

 * মোট ফ্যাট ---------- ------------- ০.১৩ গ্রাম

 * ডায়েটারি ফাইবার --- ------------- ০.৬ গ্রাম

 * চিনি ------------------------------- ৫.৯ গ্রাম

 * বেটা-ক্যারোটিন ------------ ৩১০ মিলিগ্রাম

 * ভিটামিন-এ ---------------- ৩২ মাইক্রোগ্রাম

 * থায়ামাইন-বি ১ ------ --------- ০.০৩৩ গ্রাম

 * রিবোফ্লাভিন-বি ২ ------- ------০.০২১ গ্রাম

 * নায়াসিন-বি ৩ ----------------- ০.০২৩ গ্রাম

 * প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড-বি৫---০.০২২৪ মিগ্রা

 * ভিটামিন-বি ৬ ------------- ০.০৪৯ মিলিগ্রাম

 * কোলিন ----------------------- ৪.৫ মিলিগ্রাম

 * ভিটামিন-সি ----------------- ৮.৬ মিলিগ্রাম

 * ক্যালসিয়াম ------------------ ৭.৬ মিলিগ্রাম

 * ম্যাগনেসিয়াম -------------- ১০.৪ মিলিগ্রাম

 * পটাশিয়াম ------------------ ১১৬ মিলিগ্রাম

 * সোডিয়াম ------------------- ১.৩ মিলিগ্রাম

 * ফসফরাস ------------------ ১২.৫ মিলিগ্রাম

 * ম্যাঙ্গানিজ ---------------- ০.০৫৪ মিলিগ্রাম

 * আয়রন -------------------- ০.২৭ মিলিগ্রাম

 * দস্তা -------------------------- ১.৫ মিলিগ্রাম

 * লাইকোপেন -- --------- ৪৫৩০ মাইক্রোগ্রাম

 * জল -------------------------------- ৯২%


 তরমুজের উপকারিতা-

@ ওজন কমাতে-
 তরমুজে প্রচুর পরিমানে পানি ও কম ক্যালরি ।  তাই বেশি পরিমানে তরমুজ খাইলেও কখনও ওজন বৃদ্ধি হয়না। পাওয়া সাপেক্ষে প্রতিদিন এক-দুই ফালি তরমুজ খাবার তালিকায় রাখা হলে কিছু দিনের মধ্যে আপনার ওজন কাংখিত মাত্রায় কমতে শুরু করবে। তরমুজ খান ওজন কমান। ভাল থাকু্ন।
          
@ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে -

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
একাধিক গবেষণার ফলে দেখা যায় , তরমুজে রয়েছে উচ্চমানের "সিট্রুলিন" ,যা মানব দেহের ধ্বমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে রক্ত চাপ কমিয়ে দেয়।
 হৃদরোগীদের জন্য তরমুজ খুবই উপকারী ।

@ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে -
তরমুজ ফলে বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট , পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি ও মিনারেল সমুহ, রক্তের উপকারী কোলেস্টেরল(এইচডিএল) বাড়াতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে। এতে কোন প্রকার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল(এলডিএল) না থাকায় সবসময়ই   হৃদপিন্ড বান্ধব। হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।

@ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে -   
  
তরমুজ ফলে রয়েছে "ক্যারোটিনয়েড" নামের একধরনের দুুস্প্রাপ্য এন্টিঅক্সিডেন্ট যা দৃষ্টিশক্তি    ভাল রাখার জন্য খুবই দরকারি। এই দুস্প্রাপ্য উপাদানটি অনেক ফল ও খাবারে সহজেই পাওয়াই যায় না। "ক্যারোটিনয়েড" চোখের দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে , রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে, চক্ষুর অন্যান্য সমস্যা প্রতিহত করে এবং রেটিনার সুরক্ষা প্রদান করে।

@ মস্তিষ্কের সুরক্ষায়-

 তরমুজেে রয়েছে, মস্তিষ্ক সুরক্ষা কারি শক্তিশালী সব উপাদান সমুহ, ভিটামিন "বি৬", এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট।   আর এসব উপাদানের চমৎকার উৎস হলো পাকা তরমুজ। যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সহজে এবং    স্বাভাবিক ভাবেই  কার্যক্ষম করে তুলতে খুবই কার্যকর।   মাথা ঠান্ডা রাখতেও তরমুজের জুড়ি মেলা ভার ।

@ ট্রেস কমাতে তরমুজ -

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে শক্তিশালি   অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমুহ। যাহা মানব মানবদেহের ক্ষতিকর অক্সাইড সমুহ সহজেই দুর করে  "অক্সিডেটিভ ট্রেস"জনিত অসুস্থতা কমাতে পারে।
এতে মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধন হয়ে মন ও মেজাজ ভাল থাকে।

আরও পড়ুন- আনারস

@ ক্যান্সার প্রতিরোধে-

  খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞগন বলেন ,তরমুজ ফলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার মত প্রয়োজনীয় উপাদান সমুহ, শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি। যাহা দেহের প্রদাহ কমিয়ে দেয় এবং ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি রোধ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাওয়া সাপেক্ষে,সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন এক ফালি করে তরমুজ খাবার তালিকায় রাখা হলে, ব্রেস্ট ক্যান্সার , ফুসফুসের ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুকি অনেকাংশেই কমে যায়।

@ টাইফয়েডে তরমুজের জুস-

টাইফয়েড রোগীরাা  প্রতিদিন পুষ্ট তরমুজের  আধা কাপ রস দিনে ২ বার খাইলে  উপকার পাবে। এতে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হব এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়তে থাকবে।   
@ রূপচর্চায় তরমুজ-

 আদিকাল থেকে "রুপচর্চা"য় তরমুজের ব্যবহার হয়ে আসছে । পাকা তরমুজ মুখমন্ডলে ঘষে ঘষে ৫ মিনিট লাগান । এবার শুকাইলে ১০ মিনিট পর সাবান ছাড়াই ধুয়ে ফেলুন। টিস্যু পেপার দিয়ে আলতো করে মুছে নিন । এভাবে এক সপ্তাহ করুন । দেখবেন আপনার চেহারাও তরমুজের মত রঙ হয়ে গেছে ।

তরমুজ 

তরমুজ নিয়ে আজকের লেখা এখানেই, সাথেই থাকুন।
লেখা ও ছবি, নজরুল ইসলাম।  

        
               


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।