মাছ সপ্তাহে কোনদিন কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন।
মাছ
মাছ বিশ্বের সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের মানুষের কাছে হালাল, প্রিয় ও সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত। অনেক ধর্মে পশুপাখি ভক্ষণ সম্পর্কে বিধি নিষেধ থাকলেও মাছের ব্যাপারে এরকম কিছু জানা যায় না। "মাছে ভাতে বাঙ্গালী" ভারত ও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় প্রবাদ। আসলেই মাছ পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে
স্বয়ং বিধাতার এক তুলনাহীন দান।
বিশ্বের সকল মহাদেশে মাছের নানা পদের ভোজনবিলাসী রান্না করা হয়ে থাকে যেমন : মাছের ঝোল, ভাজি, ভুনা,টিকা,ভর্তা, চাটনি, মিশালি ও বিরান সহ নানান প্রকারের অনেক ধরনের রান্না। সব কিছুর উর্ধ্বে ভারত উপমহাদেশর মাছ রান্নার স্বাদ ও ধরন বিশ্ব সেরা হিসেবে খ্যাত।
আমাদের যেমন শর্ষে ইলিশ ও ভাপে ইলিশ তেমনি গোয়ার ফিশ কারি,ব্যাঙ্গালোর ফিশ ফ্রাই ও কাশ্মীরি ফিশ ঝোল সবার কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয়।
মাছে রয়েছে এমন কিছু জরুরি উপাদান যাহা অন্য কোন আমিষ সম্বৃদ্ধ খাবারে সচারাচর দেখা যায়না।
বিশেষজ্ঞ দের মতামত থেকে জানা যায়, নানান মাছ খেতে নানান ধরনের স্বাধ পাওয়া গেলেও প্রায় সকল ধরনের মাছে রয়েছে প্রায়ই একই রকম উপকারিতা।
আর তাহা ছোট, বড়, গুড়া, রুই, কাতল,মৃগেল, ইলিশ, মাগুর,শিং,টেংরা, পুঁটি, ডাড়কে, মলা,ঢেলা যাহাই হোকনা কেন।
মাছে রয়েছে জীবন ধারনের সকল উপাদান। যাহা শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে, ডায়াবেটিস ও আর্থাইটিস মত সমস্যা গুলিকে দেহে বাসা বাঁধতে দেয়না।
@ মাছ স্মৃতি শক্তি আজীবন ঠিক রাখে-
বিশেষজ্ঞদের মতামতে জানা যানা যায় যে,ছোট বড় সকল ধরনের মাছে রয়েছে মস্তিষ্কের পুষ্টি বৃদ্ধি ও স্মরন শক্তি বৃদ্ধি করার মত অসিম ক্ষমতা।
একাধিক গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, মাছে রয়েছে শক্তিশালী "ওমেগা ফ্যাটি এসিড" যাহা মানুষের রক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। তবে যে মাছে যত বেশি চর্বি সেই মাছেই তত বেশি পরিমাণে এই উপকারী "এসিড" টি পাওয়া যায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতামতে আরও জানা যায় যে মানবদেহের কোষ প্রাচীর গঠন ও মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা ঠিক রাখতে "ওমেগা ফ্যাটি এসিড" সক্রিয় ভুমিকা পালন করে থাকে।
তাঁদের গবেষণারয় আরও উঠে এসেছে, যারা সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন বিভিন্ন ধরনের মৎসাহার করে থাকেন, তাদের মস্তিষ্কের নিউরন কোষ অধিক সুগঠিত ও অনেক বেশি কার্যক্ষম। মৎস্য ও পুষ্টিবিদদের মতে ইলিশ, বোয়াল, চিতল,গুরজি,আইড়,ভেটকি, রুই,পুটি,মলা ও ঢেলা মাছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, আয়োডিন, ফসফরাস , ভিটামিন -ডি এবং প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও নানান প্রকার উপকারী মিনারেল পাওয়া যায়। যাহা মানুষের মস্তিষ্ক শানিত করিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
@ মাছ প্রাকৃতিক প্রোটিনের আধার -
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে জানা যায় যে,যেকোনো মাছ খনিজ ও ভিটামিনে ভরপুর। যাহা শিশু, যুবা ও বৃদ্ধগন সহজে খেয়ে হজম করতে পারে এবং যারা সবসময় পেটের সমস্যায় ভোগে তাদের ক্ষেত্রেও মাছ খেতে কোন বাধা নাই।
মাছের শক্তিশালী প্রোটিনের সাথে রয়েছে, যথেষ্ট পরিমান, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি।
আমরা অনেকে মনে করি, শুধুমাত্র ছোট মাছ,মাগুর শিং, টেংরা, পাবদা ও মলা ঢেলা মাছে রয়েছে বেশি ভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেল। আসলে একথার কোন ভিত্তি পাওয়া যায়না।
ভক্ষণ যোগ্য ছোট বড় সকল মাছেই রয়েছে, পাঁঠা ও মুরগির মাংসের চেয়ে অনেক বেশি প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল।
যাহারা কোলেস্টেরল ভয়ে সবসময় ভীত থাকেন তারা নিয়মিত মাছ ভাত খেলে, তাদের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এমনিতেই সহজে ঝরিয়ে যেতে থাকে।
@ মাছ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়-
খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন মাছ খেলে মানব দেহে ডায়াবেটিস ও আর্থাইটিস নামক রোগ বাসা বাঁধতে পারেনা। হার্ট ফেইলিউর ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে আসে। নিয়ম করে মাছ খেলে দেহে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে পারে না, ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরিয়ে রাখে। নিয়মিত মাছ খান সুস্থ থাকুন।
@ মাছ শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা কমায় -
সকল ধরনের মাছে রয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ডিএইচএ ও ভিটামিন-ডি। এসব শক্তিশালি এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান মানুষের মস্তিষ্কের উপর সরাসরি কাজ করে, মস্তিষ্কের উপর এন্টি-ডিপ্রেসন হিসেবে কাজ করে থাকে। এতে করে মানুষের মানষিক ও শারীরিক সুস্ততা বজায় থাকে। মাছ খান সুস্থ থাকুন।
@ মাছ চোখ সুস্থ রাখে-
প্রতিদিন এক টুকরো মাছ পাতে রাখলে বার্ধক্যেজনিত কারনে চোঁখের সমস্যা দুরে রাখতে কোন জুড়ি নাই।
@ মাছ ভুলে যাওয়া সমস্যা প্রতিরোধ করে -
বিশেষজ্ঞগন বলেন নিয়ম করে মৎসাহার, আপনাকে "ডিমেনশিয়া" বা ভুলে যাওয়া সমস্যা এবং "অ্যালঝেইমার্স" বা স্মৃতি ভ্রষ্টতা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
নিয়ম করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন মাছ খান, আজীবন নিজের মাথা ঠান্ডা রাখুন এবং পুরনো স্মৃতি ধরে রাখুন।
@ মাছ ক্যান্সার থেকে নিরাপদ রাখে-
পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার ও নারীদের স্তন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিতে মাছের কোন জুড়ি নাই। তা হোকনা কেন, ছোট বড় যে কোন মাছ। মাছ নিয়মিত খান,ক্যান্সার সমস্যা থেকে দেহকে সুরক্ষা রাখু্ন।
আরও পড়ুন -- থানকুনি পাতার উপকারিতা
লেখা ও ছবি, ডাঃ নজরুল ইসলাম
লেখক,প্রাক্তন শিক্ষক, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিস্ট।
আমার সকল কার্যক্রমেে স্বাগত সবাইকে।
ReplyDelete