ডেফল বা ফলস ম্যাঙ্গোস্টিন


ফলসহ ডেফল গাছ

ডেফল
, ফল  সুন্দরী,বহু বর্ষজিবী সপুষ্পক বৃক্ষ । চাকমা  ভাষায় এফলকে ডামগোলা, ডাম্বেল এবং গারো সম্প্রদায়ের লোকজন আরুয়া নামে ডাকে । 

Clusiaceae পরিবারের  এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Garcinia Xanthochymus।  এ গাছে ঝোপায় ঝোপায় রং বেরংগের অনেক ফল গাছের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায়, গয়নার মত লটকে থাকে বলে একে ফল সুন্দরী গাছ বলা হয়ে থাকে। 

যতদুর জানা যায়, এ গাছটির আদি নিবাস মালয়েশিয়া।
গাছগাছড়া গবেষকদের মতে ডেফল মালয়েশিয়ার গাছ হলেও কারো কারো মতে এর নিবাস ভারত উপমহাদেশে । অপ্রচলিত এফলটি ভারত ও বাংলাদেশের বনে বাদাড়ে বুনো হিসেবে এক সময় প্রচুর জন্মিলেও আজকাল আর তেমন দেখা যায় না। শুধু মাত্র দু একজন বন প্রেমিক, গাছ প্রেমিক ও শৌখিন গৃহস্থ বাড়িতে দু একটি দেখা যায়। 

মাস্টার ছালাম, নিজের লাগানো গাছের নিচে দাড়িয়ে 

 কয়েক দিন আগে, ভেন্ডাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বন্ধুবর আঃ ছালাম এর সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি জলাইডাংগা গ্রামে, তার বাগানের মরা কাঠাল গাছ কাটানো দেখতে গিয়ে, সে তার লাগানো ডেফল ফলের গাছটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমিও সে সুবাদে প্রথম ডেফল গাছটি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করি। গাছটির আদোপান্ত দেখে। মোবাইল ক্যামেরায়  কিছু ছবি ধারণ করে  ফেলি এবং এসম্পর্কে লেখার উদ্যোগ  করি। 

গাছটির দেখার পরে বুঝতে পারি যে, এটি একটি  মাঝারি আকারের গাছ। তবে দোস্ত আব্দস ছালাম এর লাগানো গাছটি ঘন ও ঝোপঝাড় বেশির ভিতর হওয়ায় প্রায় ১৫-২০ ফুটের মত লম্বা দেখা যায়। এ গাছের পাতা কখনোই একসাথে ঝরে পড়েনা। পাতা লম্বাটে,  রং দেখতে অনেকটা  গাঢ় ও উজ্জ্বল সবুজ। সুচালো আগা ও কিনারা করাতের মত খাজ কাটা। গাছের মালিক আব্দস ছালাম জানান, মার্চ থেকে মে মাসের  দিকে ছোট  ছোট ফুল ফোটে। এ গুলো দেখতে ততটা সুন্দরী না হওয়ায় ভালভাবে চোখেও পড়েনা। ফলের  গঠন খানিকটা লম্বা  ও আগার দিকটা কিছুটা বাকানো ও চোখা। শীতকালে গাছের  পাতা কিছুটা ঝরে গেলে ফল পাকতে শুরু করে।  এ সময় ফলগুলো হলুদ  ও সোনালী রং ধারন করে এবং খাওয়ার উপযোগি হয়। ফলের ভক্ষণ যোগ্য অংশ বেশ রসালো ও সুগন্ধি যুক্ত হ'য়ে থাকে। ফলের ভিতর  এক বা একাধিক  বিজ দেখা যায় বলে গাছের রক্ষণাবেক্ষণ কারি দাদু জানায়। 


ডেফল গাছ

ব্যাবহার 

প্রাকৃতিক ভিনেগার , গাম, আঠা, জলরং, জ্যাম ও জেলি তৈরিতে এবং তেঁতুলের বিকল্প টক হিসেবেও এ ফলের ব্যবহার  হয়ে থাকে । 

খাদ্য ও পুষ্টি মান

প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণ যোগ্য ডেফল ফলে রয়েছে-৭৫ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি -

* মিনারেল ---------------------১.৪ গ্রাম 
  
* খাদ্য আশ---------------------১.১গ্রাম

* আমিষ------------------------১.২ গ্রাম 

* শর্করা--------------------------১৫ গ্রাম  

* চর্বি-------------------------- -০.৮ গ্রাম

* ক্যালসিয়াম----------------১৩৫ মিগ্রা 

* লৌহ--------------------------২.৩মিগ্রা

* ক্যারোটিন----------------৪২.৮ মিগ্রা
 
* ভিটামিন সি--------------১৮.২ মিগ্রা
  
* ভিটামিন বি১ --------------০.৭ মিগ্রা

* ভিটামিন বি২---------০.৩ মিগ্রা এবং 

* পানি --------------------------৯০ মিগ্রা 


ফল সহ ডেফল গাছ


 ** উপকারিতা 
ভারতীয় ভেষজ শাস্ত্র ও প্রসিদ্ধ কবিরাজ মসাই দের মতামত ও ব্যবহার থেকে জানা যায় যে,
ডেফল ১০ মানুষের জীবনের ১০টি রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করিতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাক

১. পেটের পীড়া 

অন্ত্রের প্রদাহ, পেটের ব্যাথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে  এ ফল খুবই কার্যকরী।

২. ফুসফুসের পীড়া 
 কাঁচা ডেফল টুকরা টুকরা করে পানিতে সিদ্ধ করে, গরম অবস্থায় অবস্থায় চায়ের মত পান করলে যে কান ধরনের কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এতে ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা সহজেই পরিষ্কার হয়ে সজীব ও কাশি মুক্ত হয়ে থাকে। 
 

৩. পাতলা পায়খানায় ডেফল -

ডেফল থেতলিয়ে সিদ্ধ  করে কুসুম কুসুম গরম অবস্থায় পান করলে পাতলা পায়খানায় আশু উপকার পাওয়া যায়। 

৪.রুচি বাড়াতে

ডেফল এর টক খেলে জ্বীহ্বার স্বাদ 

ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে অরুচি দুর হয়। 

৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে -

ভারতীয় উপমহাদেশের কবিরাজ মসাই দের মতে, কোন সুস্থ ব্যাক্তি বছরে ৫-৬ টি পাকা ডেফল খেলে, তার কাছে ক্যান্সার রোগ ঘেষতে পারেনা। 

৬. হৃদপিণ্ড ও রক্তনালি পরিষ্কারে ডেফল- 

আমরা চোখের সামনেই সবসময় দেখতে পাই,শীত কালে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে  যায়। দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। ভারতীয় উপমহাদেশের অভিজ্ঞ কবিরাজ গন একযোগে মত প্রকাশ করেন যে শীত কালিন প্রাপ্ত  ডেফল ফল খেলে সহজেই  হার্ট অ্যাটাক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে এবং রক্ত নালির বাধা সমুহ দুর হয়ে, রক্ত চলাচলের বাধা দুর করে। 

৭. মেদ ভুঁড়ি কমাতে ডেফল -

কাঁচা ডেফল ফল থেঁতো করে,রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে দেহের অবাঞ্ছিত ও খারাপ চর্বি সহজেই দেহ থেকে ঝরিয়ে যায়। এজন্য অবশ্যই ১৫দি থেকে ১ মাস টাটকা রস খেতে হবে। 

৮. জ্বর ও সর্দিকাশি সারাতে ডেফল -

সিদ্ধ করা ডেফল ফলের কাথ, চায়ের মত পান করলে সিজেনল সর্দিকাশি ও জ্বর সহজেই দুর হয়ে যায়। 





এ জাতীয়  লেখা আরো পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লেখা ও ছবি -ডাঃ নজরুল ইসলাম।

লেখক, প্রাক্তন শিক্ষক, হোমিওপ্যাথি ও হারবাল চিকিৎসক।



Comments

Popular posts from this blog

গাছ আলুর উপকারিতা

পঞ্চমুখী এর উপকারিতা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় চেতনা।

ইপিল ইপিল গাছের উপকারিতা ও সম্ভাবনা।